Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালি লোকপাল? সরকারি ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র

রাজনীতিকদের একাংশের মতে, পাঁচ বছর ঝুলিয়ে রাখার পরে ভোটের ঠিক আগে এই সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। 

বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩৪
Share: Save:

শেষ মুহূর্তে কোনও বদল না হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বাঙালি বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ভারতের প্রথম লোকপাল হতে চলেছেন বলে জানিয়েছে‌ সংবাদ সংস্থা পিটিআই। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, পাঁচ বছর ঝুলিয়ে রাখার পরে ভোটের ঠিক আগে এই সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও সূত্রের খবর, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন লোকপাল নিয়োগ কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, আইনজীবী মুকুল রোহতগি। সংবাদ সংস্থার খবর, চলতি সপ্তাহেই লোকপালের চেয়ারম্যান পদে বিচারপতি ঘোষ এবং অন্য সাত জন সদস্যের নাম ঘোষণা করতে পারে সরকার। তবে বিজেপির মন্ত্রী ও নেতারা এখন থেকেই ‘চৌকিদার’ নরেন্দ্র মোদীর তারিফ করতে শুরু করেছেন। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, পাঁচ বছর টালবাহানা করে একেবারে শেষ বেলায় এই ‘দেখনদারি’ কেন?

শুক্রবারের বৈঠকে কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ‘বিরোধী দলনেতা’র মর্যাদা না পাওয়ার জন্য সেই বৈঠক বয়কট করেন তিনি। তবে আজ কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ঝুলিয়ে রেখে বিদায়বেলায় এখন লোকপাল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। অথচ বিরোধী দলে থাকার সময় এই বিজেপিই লোকপাল নিয়ে হল্লা করত। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও গুজরাতে ১২ বছর লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেননি নরেন্দ্র মোদী। এ বারেও দ্বিচারিতা করলেন।’’ কংগ্রেসের দাবি, লোকপাল আগেই নিয়োগ হলে রাফালের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতেন না খোদ নরেন্দ্র মোদী। যদিও বিজেপির এক সূত্রের দাবি, বিদেশনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, পরমাণু শক্তি বা মহাকাশ সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে না লোকপাল। রাফালও এর আওতায় পড়ে। ফলে কংগ্রেস যদি মনে করে, এর মাধ্যমে রাফালের তদন্ত শুরু করা যাবে, তা হলে তারা ভুল ভাবছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

১৯৬৩ সাল থেকে ভারতে ‘লোকপাল’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেক বার বিল পাশের চেষ্টাও হয়। কিন্তু মনমোহন সিংহ সরকারের একেবারে শেষ লগ্নে এসে বিষয়টি মাথাচাড়া দেয়, যখন সমাজকর্মী অণ্ণা হজারে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। অণ্ণার চাপে বিলটি ২০১৩ সালেই পাশ হয়ে যায়। তার পর মোদী ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছর পরেও লোকপাল নিয়োগ হয়নি। প্রশান্ত ভূষণদের সংস্থা ‘কমন কজ’ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে আদালতের চাপেই এখন সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল বলে সূত্রের খবর। অণ্ণা আজ বলেন, ‘‘লোকপাল নিয়োগ হচ্ছে শুনে আমি খুব খুশি। ৪৮ বছর ধরে চলার পরে জনতার আন্দোলন সফল হয়েছে। লোকপাল এলে কোনও সাধারণ মানুষ দুর্নীতির প্রমাণ দিলে প্রধানমন্ত্রী এমনকি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও তদন্ত করা যাবে। অচিরেই মানুষ এর শক্তি বুঝতে পারবেন।’’ অণ্ণার আন্দোলনের প্রাক্তন সহযোগী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল অবশ্য আজ এই নিয়ে মন্তব্য করেননি। তবে আর এক প্রাক্তন সহযোগী পুদুচেরির উপরাজ্যপাল কিরণ বেদী বলেন, ‘‘দুর্নীতি রোধে এই ব্যবস্থা কার্যকরী হবে। অণ্ণা হজারেকে ধন্যবাদ।’’

লোকপাল কথা • ১৯৬৩: ‘লোকপাল’ শব্দটি তৈরি করেন আইনজ্ঞ লক্ষ্মীমল সিঙ্ঘভি। সংসদে দুর্নীতি-বিরোধী অম্বুডসমান তৈরির কথা বলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী অশোককুমার সেন। • ১৯৬৮: সং‌সদে জন লোকপাল বিল পেশ করেন শান্তি ভূষণ। • ১৯৬৯: লোকসভায় পাশ হলেও রাজ্যসভায় পাশ হয়নি বিল। • ১৯৭১-২০০৮: বারবার চেষ্টা হলেও পাশ হয়নি লোকপাল বিল। • ২০১০: লোকপালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীরা। ইউপিএ সরকারের খসড়া বিল খারিজ করলেন হজারেরা। • ৫ এপ্রিল, ২০১১: লোকপালের দাবিতে আমরণ অনশনের হুমকি হজারের। • ৯ এপ্রিল, ২০১১: সরকার দাবি মানায় অনশন উঠল। লোকপাল নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। • ১৬ এপ্রিল, ২০১১: লোকপাল খসড়া তৈরির কমিটির বৈঠক। সরকারের পক্ষে হাজির প্রণব মুখোপাধ্যায়, পি চিদম্বরমেরা। নাগরিক সমাজের পক্ষে অণ্ণা হজারে, প্রশান্ত ভূষণেরা। • অগস্ট, ২০১১: লোকসভায় পেশ লোকপাল বিল। প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় আনার দাবিতে সরব বিরোধীরা। পরে বিল যায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। • ডিসেম্বর, ২০১৩: লোকপাল বিল পাশ সংসদে। • ২০১৩-২০১৮: লোকপাল নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ প্রশান্ত ভূষণ। • ৯ মার্চ, ২০১৯: লোকপাল নিয়োগ নিয়ে চাপ সুপ্রিম কোর্টের। • ১৭ মার্চ, ২০১৯: লোকপাল নিযুক্ত হতে পারেন প্রাক্তন বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ, দাবি সূত্রের।

লোকপাল পদে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি ঘোষের নামই ঘোষণা হলে তাতে স্বাগত জানাবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তাঁর মতে, জয়ললিতার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলার জন্য বিচারপতি ঘোষকে সকলে মনে রেখেছেন। জয়ললিতার বান্ধবী শশিকলাকেও জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

তবে যে প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে লোকপাল নিয়োগ নিয়ে মামলা চালিয়ে এসেছেন, তিনি বিচারপতি ঘোষের সম্ভাব্য নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশান্তের দাবি, ‘‘গুজরাত হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের বোনের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন বিচারপতি ঘোষ।’’ প্রশান্তের আরও দাবি, ‘‘সিনিয়র বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্যকে টপকে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Pinaki Chandra Ghose Lokpal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE