এক লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা!
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি বছরে শুধু এই একটি রাজ্যেই প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প শিলান্যাস বা উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি মাসে অন্তত এক বার করে প্রধানমন্ত্রী বিহারে গিয়েছেন। মার্চ মাসে বিহারে না গেলেও ২২ মার্চ বিহার দিবসে বিহারবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিহারে ৬ অক্টোবরের ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস বা উদ্বোধন করেছেন মোদী, যা চলতি বছরে গোটা দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দের কাছাকাছি।
তথ্য বলছে, বিহারে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন-শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী প্রতি বারই জনসভা করেছেন। সেখান থেকে রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছেন। যেমন, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে এপ্রিলে বিহারের মধুবনী থেকেই ষড়যন্ত্রকারীদের শিক্ষা দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে রোহতাসে গিয়ে মহিলাদের সিঁদুরের ক্ষমতার জয়গান গেয়েছিলেন।
বিহারে রাজ্য সরকারের দু’টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেছেন মোদী। সেপ্টেম্বরে তিনি রাজ্য জীবিকা নিধি সাখ সহকারী সঙ্ঘের উদ্বোধন করেছিলেন। যার কাজ গ্রামীণ মহিলা উদ্যোগপতিদের অর্থ জোগানো। তার পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনার উদ্বোধন করেন। যে প্রকল্পে ৭৫ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৭৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছিল। আরজেডি নেতৃত্বের অভিযোগ, বিহারে বিজেপির জোট সরকার চললেও মোদী সরকার রাজ্যের জন্য ‘বিশেষ প্যাকেজ’-এর ঘোষণা করেনি। ভোটের আগে তাই বিহারে শিলান্যাস করতে, ফিতে কাটতে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদীর বিহারে শিলান্যাস-উদ্বোধনের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে ভাগলপুর থেকে। সেখান থেকে তিনি পিএম-কিসানের কিস্তির টাকা চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলেন। মোতিহারিতে গোকুল মিশনে উৎকর্ষ কেন্দ্রের শিলান্যাস, রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।এপ্রিল থেকে বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
আবার গত ফেব্রুয়ারিতেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করেছিলেন বিহারের মধুবনী নকশা আঁকা শাড়ি পরে। সেই বাজেটে বিহারে জাতীয় মাখানা বোর্ড গঠন, পটনার আইআইটি-র সম্প্রসারণ, বিহারে খাদ্য প্রযুক্তির জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি, পটনা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ, পটনার কাছে বিহটায় নতুন বিমানবন্দর, কোশী নদীর খালের মতো একগুচ্ছ উপহার ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেল, সড়ক, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবাদি পশু সংক্রান্ত উৎকর্ষ কেন্দ্র— কোনও ক্ষেত্রেই বিহারের জন্য উপহার বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী। ক্যাবিনেট সচিবালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে শুধু বিহারের জন্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার রেল বা সড়ক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার কাজ দ্রুত শুরু হবে।
কিন্তু বিহারের জন্য ‘বিশেষ প্যাকেজ’? প্রধানমন্ত্রী দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, বাজেটের ঘোষণা এবং এক বছরে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন-শিলান্যাস ‘বিশেষ প্যাকেজ’-এর থেকে কম নয়। গত অর্থ বছরেও কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে বিহারের রেল, সড়ক, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিহারে ভোট পেতে টাকা খরচ করছেন। আর বাংলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়নি বলে রাজ্যকে পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)