E-Paper

বিক্ষোভ উড়িয়ে মধ্যরাতে পাশ ‘জি রাম জি’ বিল

‘ভিবি-জি রাম জি’ বিলটি নিয়ে আলোচনার সময়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেল লোকসভায়। তার মধ্যে দুপুরেই বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২৪
রাজ্য সভার অন্দরে।

রাজ্য সভার অন্দরে। ছবি: পিটিআই।

শিবরাজ সিংহ চৌহানের সামনে বিল ছিঁড়ে ওড়ানো হচ্ছে। কেউ কাগজের প্লেন বানিয়ে ওড়াচ্ছেন। সমস্ত বিরোধী সাংসদ লোকসভার ওয়েলে। হাতে মহাত্মা গান্ধীর নাম লেখা পোস্টার বা গান্ধীর ছবি। সংসদ টিভির ক্যামেরা কোনও ভাবেই বিক্ষোভের দৃশ্য দেখাতে নারাজ। ক্যামেরার সামনে মহাত্মা গান্ধী লেখা পোস্টার তুলে ধরার জন্য কিছু বিরোধী সাংসদ লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের টেবিলে উঠে পড়েছেন। শিবরাজ সিংহ চৌহান এই সবের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী, হিন্দুত্ব, আরএসএসের গুণগান করে চলেছেন।

‘ভিবি-জি রাম জি’ বিলটি নিয়ে আলোচনার সময়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই দৃশ্য দেখা গেল লোকসভায়। তার মধ্যে দুপুরেই বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার। এর পরে এ দিন সন্ধ্যা থেকে রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বিরোধীরা ওয়াক-আউট করলে বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার। বিরোধীরা এর পরে সংসদের চত্বরে ধর্নায় বসেন।

‘ভিবি-জি রাম জি’ বা বিকশিত ভারত-গ্রামীণ রোজগার অজীবিকা মিশন গ্যারান্টি বিল নিয়ে বুধবার লোকসভায় রাত দেড়টা পর্যন্ত আলোচনা হয়। ৯৯ জন সাংসদ বক্তৃতা করেন। বিরোধীরা আইনটি থেকে মহাত্মার নাম বাদ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এই বিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোরও দাবি তোলেন। কিন্তু সে সবের পরোয়া না করে বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ লোকসভায় বিলটি পাশ করায় সরকার। যে বিলে রোজগারের আইনি নিশ্চয়তাই আর রাখা হচ্ছে না বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এর পরে সন্ধ্যাবেলাতেই রাজ্যসভায় সেই বিল নিয়ে আসে মোদী সরকার। আট ঘণ্টা ধরে আলোচনা শেষে মধ্যরাতের পরে সেই বিল পাশ করানো হয়।

এই গোটাটাই ঘটল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের সময়। সংসদের দুই কক্ষেই গভীর রাত পার করে ‘জি রাম জি’ বিলটি পাশ হল। বিরোধীদের প্রশ্ন, ইচ্ছে করেই কি মোদীর অনুপস্থিতিতে তাঁর সরকার এই কাজ করল?

শুক্রবার দুপুরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হচ্ছে। তার আগে কেন তাড়াহুড়ো করে বিল পাশ করানোর প্রয়োজন পড়ল? সরকারি সূত্রের দাবি, আগামী অর্থ বছর বা ১ এপ্রিল থেকে নতুন ধাঁচের রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্প চালু হবে। বাজেটে সেই মতো অর্থ বরাদ্দও হয়ে যাবে। তাই শীতকালীন অধিবেশনে বিল পাশ করানো হল। বিরোধীদের অভিযোগ, অধিবেশনের গোড়ায় বন্দে মাতরম্ নিয়ে আলোচনায় সময় নষ্ট করে শেষবেলায় তাড়াহুড়ো করে মোদী সরকার বিল পাশ করিয়েছে। যাতে মধ্যরাতে সংসদে বিরোধীদের আপত্তি ধামাচাপা পড়ে যায়।

রাজ্যসভায় এই বিল নিয়ে আলোচনার জন্য কার্যসূচি উপদেষ্টা কমিটি সময় বরাদ্দ করেনি। তাও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হতে বিরোধীরা আপত্তি তোলেন। চেয়ারম্যান সি পি রাধাকৃষ্ণণ জানান, অতীতেও সময় বরাদ্দ না করে বিল পাশ হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে রাজ্যসভায় মনরেগা ও মহাত্মাকে হত্যার বিল পাশ করানো হল। এই সরকার আর কত নীচে নামবে?”

রাজ্যসভাতেও বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, কেন রোজগার গ্যারান্টি আইন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম মহাত্মা নামটি বাদ পড়ছে? কেন এই প্রকল্পের মজুরির খরচের ৪০ শতাংশ রাজ্যের উপরে চাপানো হচ্ছে? কেন মুখে কাজের দিন বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হলেও, মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না? গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান নাটকীয় ভাবে উত্তর দিয়েছেন, মোদী সরকার মহাত্মার আদর্শের পথে চলে। কিন্তু নাম বাদ দেওয়ার সদুত্তর দেননি। শুধু বলেছেন, প্রকল্পের নতুন নামের মধ্যে তার উদ্দেশ্য বলা রয়েছে। বিকশিত ভারতের সঙ্গে বিকশিত গ্রামের লক্ষ্যেই এই বিল। তাঁর দাবি, রোজগারের গ্যারান্টি থাকছে।

সাংসদ অজয় ভট্টের মতো বিজেপি নেতারা দাবি করেন, বিলে ‘জি রাম জি’ থাকার অনেক সুবিধা। ভট্টের দাবি, ‘শ্রী রাম, জয় রাম, জয় জয় রাম’ বললে বেকাররা চাকরি পায়, বখা ছেলে শুধরে যায়, দাম্পত্য কলহ মেটে, মেয়ের বিয়ে হয়, গরু দুধ দিতে শুরু করে! বিরোধীরা অভিযোগ করেন, নাথুরাম গডসের পূজারীরা মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেবে, এটাই স্বাভাবিক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rajya Sabha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy