Advertisement
E-Paper

ক্ষিপ্র হামলায় গরুড়, আড়াই দিন নড়তেই পারল না জঙ্গিরা

বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। লক্ষ্য ছিল ফাইটার জেট, অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করা। সে সবের খুব কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদের আত্মঘাতী বাহিনী। কিন্তু বায়ুসেনার কোনও সরঞ্জামে তাদের আঁচড় কাটতে দেয়নি এলিট ফোর্স ‘গরুড়’।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৫:২১

বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। লক্ষ্য ছিল ফাইটার জেট, অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করা। সে সবের খুব কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদের আত্মঘাতী বাহিনী। কিন্তু বায়ুসেনার কোনও সরঞ্জামে তাদের আঁচড় কাটতে দেয়নি এলিট ফোর্স ‘গরুড়’। দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা লড়াই চলেছে। অর্থাৎ আড়াই দিন। এতটা সময় ধরে ফাইটার জেট বা কপ্টারের দিকে জঙ্গিদের ঘেঁষতে না দিয়ে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে গরুড় বাহিনী। বিভিন্ন দেশের এলিট ফোর্সের কাছে ভারতের গরুড় এখন তাই চর্চার প্রধান বিষয়।

যত রকম এলিট ফোর্স রয়েছে দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে, পাঠানকোটে তাদের সবাইকে এক সঙ্গে ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেনাবাহিনীর কম্যান্ডোরা ছিলেন। ছিল এনএসজি। সর্বোপরি ছিল বায়ুসেনার নিজস্ব স্পেশ্যাল এলিট ফোর্স— গরুড়। বায়ুসেনার এই বিশেষ গরুড় কম্যান্ডোরাই অভিযানের মূল দায়িত্বে ছিলেন। পাকিস্তানে ঢুকে লাদেনকে নিকেশ করেছিল মার্কিন নৌসেনার যে সিল-টিম-৬, ভারতীয় বায়ুসেনার গরুড় কম্যান্ডোরা দক্ষতায়, আধুনিকতায় এবং ক্ষিপ্রতায় তাদের সঙ্গেই তুলনীয় বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। গরুড় কম্যান্ডোদের অবিশ্বাস্য প্রতি আক্রমণের জেরেই বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকেও ফাইটার জেট বা অ্যাটাক হেলিকপ্টারের কোনও ক্ষতি করতে পারেনি জঙ্গিরা। বায়ুসেনার এলিট ফোর্স গরুড় ঠিক কী ধরনের কাজে পারদর্শী? পাঠানকোটের হাতের বাইরে চলে যাওয়া পরিস্থিতির মোকাবিলাই বা তাঁরা করলেন কোন পথে? জেনে নেওয়া যাক সংক্ষেপে।

বায়ুসেনার বিভিন্ন ঘাঁটি রক্ষা করার মূল দায়িত্ব গরুড় কম্যান্ডোদের। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় গরুড় বাহিনীকে। আচমকা কোনও পরিস্থিতি সামনে এলে দ্রুত তার মোকাবিলা করতে দক্ষ গরুড়। এ ছাড়া যুদ্ধের সময় শত্রুর এলাকায় আকাশপথে রেকি চালিয়ে আসা, প্রতিপক্ষের রেডার অকেজো করে দেওয়া, যে কোনও ধরনের বিপর্যয়ে উদ্ধারকাজ চালানো— এমন নানা প্রশিক্ষণ রয়েছে গরুড় বাহিনীর। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং বিধ্বংসী হেলিকপ্টার ও ফাইটার জেটে সমৃদ্ধ এলিট ফোর্স গরুড়, দ্রুত হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে তছনছ করতে প্রবল দক্ষ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

• ছয় জঙ্গির মৃত্যুর পরেও গুলির শব্দ

• যদি মিথ্যে বলি আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক

তাই পাঠানকোটে গরুড় কম্যান্ডোদের দ্রুত মোতায়েন করতে সময় নেয়নি বায়ুসেনা। হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে পাকিস্তান থেকে বার বার নির্দেশ এসেছিল, ভারতীয় বায়ুসেনার এমআই-২৫ ও এমআই-৩৫ কপ্টার ধ্বংস করার জন্য। নির্দেশ এসেছিল অন্যান্য আধুনিক যুদ্ধের সরঞ্জাম নষ্ট করার জন্য। জঙ্গিরা মরিয়া হয়ে সেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ঢুকে, তারা বায়ুসেনার কপ্টার এবং ফাইটার জেটগুলির খুব কাছেই পৌঁছে যায়। যে ক্যান্টিনে লুকিয়ে তারা ৬০ ঘণ্টা লড়াই চালিয়েছে, সেখান থেকে ওই কপ্টারগুলিতে আঘাত করাও এমন কিছু শক্ত ছিল না। কিন্তু কোনও এয়ারক্র্যাফ্টের গায়ে জঙ্গিরা যে ৬০ ঘণ্টার চেষ্টাতেও আঁচড় কাটতে পারেনি, তার কৃতিত্ব মূলত গরুড় কম্যান্ডোদেরই। হেলিকপ্টার নিয়ে বায়ুসেনা ঘাঁটির আকাশে দাপিয়ে বেড়িয়েছে গরুড়। মহাভারতে বর্ণিত গরুড় যেমন সাপেদের যম ছিলেন, পাঠানকোটে গরুড় কম্যান্ডোরাও একই রকম ভঙ্গিতে যম হয়ে উঠেছিলেন আত্মঘাতী জঙ্গিদের জন্য। হেলিকপ্টারের এমন ক্ষিপ্র আনাগোনা আগে কখনও দেখেনি পাঠানকোট। ক্যান্টিন বিল্ডিংকে ঘিরে বিভিন্ন দিক থেকে এমন ভাবে টহল দিচ্ছিল গরুড়ের কপ্টারগুলি যে, বাইরে বেরিয়ে দামী যুদ্ধ সরঞ্জামের ক্ষতির চেষ্টাই করতে পারেনি জঙ্গিরা। যত বার বাইরের দিকে আসার চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা, অ্যাটাক হেলিকপ্টারের বিধ্বংসী গোলাবর্ষণ ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের। উঁচুতে উড়তে উড়তে আচমকা চোখের পলকে নীচে নেমে এসে যে ভাবে গুলি চালিয়েছে হেলিকপ্টার গানশিপ, সে দৃশ্য চমকে দিয়েছে পাঠানকোটের বাসিন্দাদের। ফলে বায়ুসেনা ঘাঁটির ক্ষতি করার চেষ্টা সে ভাবে করতেই পারেনি। ক্ষতি করার সুযোগটুকু পাওয়ার জন্য বেঁচে থাকা দরকার। সেই চেষ্টাতেই তটস্থ হয়ে থেকেছে আড়াই দিন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

গরুড় কম্যান্ডোদের এই কৌশলী লড়াই প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন মহলের। বিশ্বের সেরা সশস্ত্র বাহিনীগুলির যে সব এলিট ফোর্স রয়েছে, ভারতের গরুড় বাহিনীর লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে এখন কাটাছেঁড়ায় ব্যস্ত তারাও।

garud commandoes pathankot air force station terror attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy