Advertisement
E-Paper

সিদ্দেকের প্রচারে নেই গৌতম-জুজু

ভোট প্রচারে কী বলবেন, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী সিদ্দেক আহমেদ। সৌজন্যে, গৌতম রায়! প্রতিটি নির্বাচনে ‘গৌতম-জুজু’ দেখিয়েই প্রচার করেন সিদ্দেক। প্রচারসভায় ঘুরে ঘুরে বলেন— ‘দক্ষিণ করিমগঞ্জ দখলের চেষ্টায় রয়েছেন গৌতম রায়।

শীর্ষেন্দু সী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৯

ভোট প্রচারে কী বলবেন, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী সিদ্দেক আহমেদ। সৌজন্যে, গৌতম রায়!

প্রতিটি নির্বাচনে ‘গৌতম-জুজু’ দেখিয়েই প্রচার করেন সিদ্দেক। প্রচারসভায় ঘুরে ঘুরে বলেন— ‘দক্ষিণ করিমগঞ্জ দখলের চেষ্টায় রয়েছেন গৌতম রায়। আমাকে না জেতালে গোটা এলাকা গৌতমবাবুর উপনিবেশে বদলে যাবে।’

এতে লাভবানও হন সিদ্দেক। আগের দু’টি নির্বাচনের ফলাফলে তা একেবারেই স্পষ্ট। দুই নেতার পৃথক জনগোষ্ঠীগত পরিচিতির জন্য দক্ষিণ করিমগঞ্জে ভোটারদের বড় অংশ গৌতমকে ‘ঠেকাতে’ সিদ্দেকের পক্ষেই ভোট দিয়ে তাঁকে জিতিয়েছেন।

এ বারের ছবিটা কিন্তু একেবারেই অন্যরকম। দক্ষিণ করিমগঞ্জ আসনে সিদ্দেকের সমর্থনে প্রচারে সামিল হয়েছেন গৌতমবাবুও! একাধিক জনসভায় বলেছেন, ‘‘সম্পর্ক ভাল না থাকার জন্য এক সময় সিদ্দেকের বিরোধিতা করেছি। কিন্তু এখন আমাদের দু’জনের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি আর নেই। সিদ্দেক আমার ভাই।’’

তার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্দেকের ভোট-প্রচারের পুরনো হিসেব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে।

কংগ্রেস অন্দরমহলের কানাঘুষো গৌতমবাবু ও সিদ্দেক আহমেদ একে অন্যকে পছন্দ করতেন না। মাঝেমধ্যেই বিবৃতি-যুদ্ধ হয় দুই নেতার। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেন সিদ্দেক। পরাজয়ের পর কংগ্রেস প্রার্থী ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য সিদ্দেকের সমালোচনায় সরব হন। তিনি অভিযোগ করেন— সিদ্দেকই এআইইউডিএফ-এর রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে সাংসদ করেছেন। ললিতবাবুর এ সব কথার জেরে নিজের বিধানসভা এলাকায় অবশ্য সিদ্দেকেরই অবস্থান মজবুত হয়েছে।

কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলছেন, বিভিন্ন কারণে এ বার আর দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বাছাইয়ের বিষয়ে নিজেকে জড়াননি গৌতমবাবু। অপছন্দের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামেননি। কাটলিছড়াতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন নিজেকে।

দক্ষিণ করিমগঞ্জে মোট ভোটার ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৬৪ জন। এর মধ্যে লক্ষাধিক মুসলমান সম্প্রদায়ের। জনবিন্যাস ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই আসনে বিজেপির জয়লাভ সহজ নয়। এখনও পর্যন্ত একমাত্র ১৯৯১ সালে এখানে গেরুয়া-বাহিনী জয়ী হয়। সে বার বিধায়ক হন প্রণবকুমার নাথ। মুসলমান ভোট বিভাজন-সহ অন্যান্য কারণে তা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ওই আসনে বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দু’বার প্রার্থী হন লড়াকু নেত্রী হিসেবে পরিচিত শিপ্রা গুণ। কিন্তু এক বারও সাফল্য মেলেনি।

অন্য দিকে, ওই কেন্দ্রে এআইইউডিএফ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারও ক্রমে বাড়ছে। ললিতবাবুর অভিযোগ সত্যি হলে, সিদ্দেক আহমদ দক্ষিণ করিমগঞ্জের ভোটারদের যে ভাবে তালাচাবি প্রতীকের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন, তা ব্যুমেরাং হয়ে ফেরার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা ছাড়া, বিজেপি অগপর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করলেও করিমগঞ্জে অগপর জেলা সভাপতি আজিজুর রহমান তালুকদার এআইইউডিএফ-র প্রচারে নেমেছেন। এ সব ঘটনা শিপ্রা গুণকে ক্রমে আশাবাদী করে তুলছে। তাঁর দাবি, কোনও কাজ করতে না পারায় সিদ্দেক আহমেদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বইছে। তাঁর অনেক ঘনিষ্ঠ নেতা আশাহত হয়ে অন্য দলকে ভোট দেবেন। এআইইউডিএফ প্রার্থী আব্দুল আজিজ খানের ভোট যত বাড়বে, শিপ্রাদেবীর বিধায়ক হওয়ার স্বপ্নপূরণের পথ ততই মসৃণ হবে।

এ সবে কান দিতে নারাজ সিদ্দেক। তিনি বলছেন, ভোট প্রচারে গৌতমবাবুর কথা বা হিন্দু-মুসলমানের হিসেব তিনি সে ভাবে কখনও করেননি। দক্ষিণ করিমগঞ্জের মানুষ তাঁকে প্রথম বার জিতিয়েছেন উন্নয়নের স্বপ্ন চোখে নিয়ে। পরের দু’বার বিধায়ক করেছেন উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে। এ বারও সে জন্যই ভোটাররা তাঁকে বিধানসভায় পাঠাবেন। বিরোধী প্রার্থীদের কথাবার্তা উড়িয়ে দিচ্ছেন এআইইউডিএফ প্রার্থী আব্দুল আজিজ খান। গত লোকসভা ভোটের হিসেব দেখিয়ে তাঁর দাবি — এ বার নীরবে সবাইকে চমকে দেবেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের মানুষ। ভোটের ফল প্রকাশের পরই তা বোঝা যাবে।

Siddeek Ahmed Gautam Roy congress Karimganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy