Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়

গ্রন্থাগার-বিধি নিয়ে তোপ উপাচার্যকে

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার স্নাতক স্তরের ছাত্রীদেরও ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। এ টুকুই দাবি ছিল। তাতে সোমবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জমির উদ্দিন শাহ বলেন, “মেয়েদের গ্রন্থাগারে ঢোকার অনুমতি দিলে ছেলেদের আসাও চার গুণ বেড়ে যাবে।” তার পর থেকেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।

উপাচার্যের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

উপাচার্যের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

সংবাদ সংস্থা
আলিগড় শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার স্নাতক স্তরের ছাত্রীদেরও ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। এ টুকুই দাবি ছিল। তাতে সোমবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জমির উদ্দিন শাহ বলেন, “মেয়েদের গ্রন্থাগারে ঢোকার অনুমতি দিলে ছেলেদের আসাও চার গুণ বেড়ে যাবে।” তার পর থেকেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার উপাচার্যের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মঙ্গলবার রিপোর্টও তলব করেছে তাঁর মন্ত্রক। এত কিছুর পরেও উপাচার্যের দাবি, স্রেফ স্থানাভাবের জন্যই স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের প্রধান গ্রন্থাগারে আসতে দেওয়া হয় না।

কিন্তু তা মানতে নারাজ ছাত্রীরা। তাঁদেরই এক জনের প্রশ্ন “বসার জায়গা নিয়ে অসুবিধা থাকলে নিদেনপক্ষে আমাদের গ্রন্থাগারে ঢুকে বই তুলতে দেওয়া হোক।” জমির উদ্দিন অবশ্য জানাচ্ছেন, এখন যা পরিকাঠামো তাতে মৌলানা আজাদ গ্রন্থাগারে নতুন করে স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলে লাইনে দাঁড়িয়ে বই তোলা তো দূর অস্ৎ, দাঁড়ানোর জায়গাটুকু থাকবে না। এবং এতে বৈষম্যমূলক কিছু নেই। তাঁর যুক্তি, যদি মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যই করা হতো, তা হলে স্নাতকোত্তর স্তরের মহিলা পড়ুয়াদেরও গ্রন্থাগারে ঢুকতে দেওয়া হতো না। কিন্তু তা হচ্ছে না। সুতরাং বৈষম্যের অভিযোগ ধোপে টেকে না।

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের জন্য তৈরি ‘উইমেন্স কলেজের’ অধ্যক্ষা নাইমা খাতুনও উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের জন্য ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গ্রন্থাগারে না গিয়েও সেখানকার যাবতীয় বই ও জার্নাল ব্যবহার করতে পারেন। এর পর বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে কী করে?

কিন্তু এখন প্রশ্ন, স্থানাভাব যদি স্নাতকের ছাত্রীদের মূল গ্রন্থাগারে ঢুকতে না দেওয়ার কারণ হয়, তা হলে সেই একই যুক্তিতে স্নাতক স্তরের ছাত্রদের আটকানো হচ্ছে না কেন? এখানে উপাচার্যের যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চত্বর থেকে উইমেন্স কলেজ ২ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ মৌলানা আজাদ গ্রন্থাগারে আসতে গেলে এই পথটা উজিয়ে আসতে হবে ছাত্রীদের। তাঁদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের বন্দোবস্ত না করা গেলে কী ভাবে মূল গ্রন্থাগার ব্যবহার করবেন তাঁরা?

সে সব শুনতে অবশ্য রাজি নন কেউ। অনেকের দাবি, ব্যবস্থা না থাকলে অবিলম্বে নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করুন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই যুক্তির আড়ালে স্নাতকের ছাত্রীদের বঞ্চিত করা হবে কেন? কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও বিশ্ববিদ্যালয়কে লেখা এক চিঠিতে মন্ত্রক জানিয়েছে, “মহিলা পড়ুয়াদের গ্রন্থাগার ব্যবহার না করতে দেওয়া মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এর অনুমতি দেওয়া যায় না।” মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বয়ানে, “মহিলা হিসেবে উপাচার্যের এ হেন মন্তব্য শুধু দুঃখ দেয় না, ক্ষোভও তৈরি করে...এমন মন্তব্য কন্যাসন্তানদের অপমান।” সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লাও বলেন, “মৌলাদা আজাদ নিজে নারীশিক্ষা নিয়ে ভাবতেন... তাঁরই জন্মদিনে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এ কথা বলছেন! ভাবা যায় না।”

উল্লেখ্য, মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এর আগেও উঠেছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শালীন পোশাক পড়ার বিবৃতি দিয়ে গত বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই মেয়েদের হস্টেলে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তাতে এতটাই বিতর্ক শুরু হয় যে সেটা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইতিহাস বলছে, স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের মূল গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে না দেওয়ার নিয়ম চলে আসছে প্রথম থেকেই। দু’দিনের বিতর্কের জেরে বহু পুরনো সেই নিয়ম বদলানো হয় কিনা, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE