Advertisement
E-Paper

দক্ষিণে ভাসান বিদায়ে বড় প্রশ্নের মুখে রাহুলই

ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে শরিক-বন্ধুরা আগেই পালিয়েছেন একে একে। নিজ-নিজ পথ ধরতে শুরু করলেন কংগ্রেসের নেতারাও! আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন জি কে ভাসান। তামিলনাড়ুর প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা গোবিন্দস্বামী মুপানরের ছেলে ভাসান দল ছাড়ায় দলে আরও বড় প্রশ্নের মুখে পড়ল রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব ও নতুন নেতাদের তুলে আনার লক্ষ্যে তাঁর তৎপরতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৭

ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে শরিক-বন্ধুরা আগেই পালিয়েছেন একে একে। নিজ-নিজ পথ ধরতে শুরু করলেন কংগ্রেসের নেতারাও! আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন জি কে ভাসান। তামিলনাড়ুর প্রবাদপ্রতিম কংগ্রেস নেতা গোবিন্দস্বামী মুপানরের ছেলে ভাসান দল ছাড়ায় দলে আরও বড় প্রশ্নের মুখে পড়ল রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব ও নতুন নেতাদের তুলে আনার লক্ষ্যে তাঁর তৎপরতা।

মনমোহন জমানার জাহাজমন্ত্রী ভাসান অবশ্য সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে সরাসরি নেতিবাচক কোনও মন্তব্য করেননি। তবে চেন্নাইয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি এ দিন বলেন, তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের আর ভবিষ্যৎ নেই। তাই নতুন দল গড়ে বাবার তৈরি তামিল মানিলা কংগ্রেস (টিএমসি)-কেই পুনরুজ্জীবিত করতে চলেছেন তিনি।

লোকসভা এবং একের পর এক বিধানসভা ভোটে হেরে এমনিতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়া দশা কংগ্রেসের। তার উপর ভাসানের বিদায়ে সন্দেহাতীত ভাবেই বড় ধাক্কা খেল কংগ্রেস। এমনকী দলের মধ্যে এ-ও আশঙ্কা যে, কামরাজের রাজ্যে এ বার সাইনবোর্ড পার্টিতে পর্যবসিত হতে পারে এই সাবেক দল।

স্বাভাবিক ভাবেই এই দক্ষিণী ঝঞ্ঝা আজ আছড়ে পড়েছে রাহুল গাঁধীর দোরগোড়াতেই। ঘরে-বাইরে ফের এই প্রশ্নটাই উঠেছে, এটাও কি রাহুলের ব্যর্থতা নয়? দুর্দিনে তিনি দলকে ধরে রাখতে পারছেন না! ভোটের মুখে হরিয়ানায় দল ছেড়েছেন অনেকে। চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ যাঁদের অন্যতম। দলে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে মহারাষ্ট্রে। দল ছাড়ার হুমকিও দিচ্ছেন অনেকে। নতুন দল গড়ার হুমকি দিচ্ছেন ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগী। ভাসানের দলত্যাগকে তাই কংগ্রেসে আরও বড় ভাঙনের সূচনা হিসেবেও দেখতে চাইছেন অনেকে।

কিন্তু রাহুলের ভুলটা কোথায়?

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান নেতার ব্যাখ্যা, এই অবস্থার জন্য রাহুলই অনেকাংশে দায়ী। কারণ, রাজ্যে-রাজ্যে নতুন নেতা তৈরি করতে চাইছেন রাহুল। আর তা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের ক্রমাগত কোণঠাসা করছেন। তামিলনাড়ুতে ভাসানকে অনেক আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা উচিত ছিল। অথচ তা না করে কখনও তাঁর অনুগামী নেতাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আবার এখন যে ইলানগোভানকে সেই পদে রাহুল বসিয়েছেন, তাঁর কোনও রাজনৈতিক উচ্চতাই নেই। শুধু তামিলনাড়ু নয়, রাজ্যে-রাজ্যে এই ভুল হচ্ছে। যেমন মহারাষ্ট্রে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে নেতা নির্বাচিত করা, উত্তরাখণ্ডে বিজয় বহুগুণাকে গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো এ সবই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। ঠিক একই কারণে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাও হাতছাড়া হয়েছে। কারণ, প্রয়াত রাজশেখর রেড্ডির পুত্র জগন্মোহন রেড্ডিকে যেমন রাহুল উঠতে দেননি, তেমনই তাঁর কারণেই কেশব রাওয়ের মতো তেলঙ্গানার নেতারা কংগ্রেস ছেড়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এখন আবার সাংগঠনিক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা বাছতে চাইছেন তিনি।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, এখানেই রাহুলের সঙ্গে মতান্তর হচ্ছে দলের প্রবীণ ও প্রৌঢ় নেতাদের। গত পাঁচ দিন ধরে রোজ আট দশ জন করে কংগ্রেস নেতাকে ডেকে বৈঠক করছেন রাহুল। কিন্তু এই সব বৈঠকে রাহুলের সঙ্গে তাঁদের মতান্তরটাই বড় হয়ে উঠছে। সংগঠনের নেতা বাছাই করা, শরিকের সঙ্গে সমঝোতা, প্রচারের কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আকাশ কুসুম ভাবনা ছেড়ে বাস্তবের মুখোমুখি হতে বারবার রাহুলকে অনুরোধ করছেন দলের প্রবীণ নেতারা।

যদিও কংগ্রেসের বর্ষীয়ানরা কী চাইছেন কিংবা তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের কী হবে সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, রাহুল কি নিজেকে বদলাবেন? ভাসানের বিদায়ের পরেও সেই ধন্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না কংগ্রেস।

তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস ১৯৬৭-র পর থেকে আজ পর্যন্ত নিজের জোরে সরকারে আসেনি। কখনও এডিএমকে, কখনও ডিএমকে-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শরিক হয়েছে সরকারের। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ু-পুদুচেরি মিলিয়ে কংগ্রেস একটি আসনও পায়নি। ভোট পেয়েছে মাত্র ৪.৬ শতাংশ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, ভাসান নতুন দল গড়লে তামিলনাড়ুর তস্য ছোট আঞ্চলিক দলগুলির থেকেও খারাপ দশা হতে পারে কংগ্রেসের। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের যেটুকু সংগঠন ছিল তার বারো আনাই মুপানরের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এআইসিসি-র এক শীর্ষ নেতার আক্ষেপ, “ভাসান তথা মুপানর পরিবারের অনুগামীরা কংগ্রেস ছাড়ার অর্থ, শরীরটা চলে যাওয়া, এর পর জেলায় জেলায় কংগ্রেস দফতরগুলো স্রেফ গয়নার মতো পড়ে থাকবে!”

কামরাজের ভাবশিষ্য মুপানর ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন জয়ললিতার সঙ্গে কংগ্রেস জোট গড়ার কারণে। তাঁর গড়া তামিল মানিলা কংগ্রেস সে বছর ভোটে ভাল ফলও করে। এর পর কেন্দ্রে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শরিকও হন মুপানর। সনিয়া গাঁধী কংগ্রেস সভানেত্রী হওয়ার পরে মুপানর-পুত্র ২০০২-এ তামিল মানিলা কংগ্রেসকে মূল কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। গোড়ায় কিছু দিন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তিনি। তার পর তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেন সনিয়া-মনমোহন। যদিও মন্ত্রিত্ব নয়, রাজ্যে সংগঠনের দায়িত্ব নিতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে বারবার বাদ সাধেন চিদম্বরম, মণিশঙ্কর আইয়ারের মতো তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতারা। যাঁরা তামিলনাড়ুর তুলনায় দিল্লিতে বেশি পরিচিত মুখ। অথচ রাজ্যে তৃণমূল স্তরে অন্যতম পরিচিত মুখ হলেন ভাসান। এই অবস্থায় দল ছাড়ার প্রস্তুতি ভাসান অনেক আগে থেকেই নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কদিন আগে তাঁর অনুগামী গণদেশিকানকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে রাহুল সরিয়ে দেওয়ার পরই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নেন মুপানর-পুত্র।

কংগ্রেস মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, দলই ভাসানকে বহিষ্কার করেছে দলবিরোধী কাজের জন্য।

G K vasan rahul gandhi congress new party tamilnadu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy