বিহারে জমিদার দীপনারায়ণ সিংহের বাড়ির সামনে থাকা ডাকবাক্সকে দেখে ব্যোমকেশ বক্সীর মনে হয়েছিল বেশ দাঁড়িয়ে আছে যেন লাল কুর্তা পরা সেপাই। কিন্তু আসলে শ্রীরাধিকার দূতী। যুগ বদলেছে। আগরতলার লাল ডাকবাক্সগুলির জেল্লা অবশ্য এখনও আছে। ব্যবহার কমেছে। কেউ কেউ ভাবেন, ডাক নয়, হয়তো অন্য কোনও ব্যবহারের জন্য রয়েছে বাক্সগুলি।
দুপুরের ঠা ঠা রোদে ডাকবাক্সের চকচকে রং থেকে ঠিকরে আসা আলোর ঝলকানি চোখে ধাক্কা দিলেও প্রৌঢ়েরা মুচকি হেসে বলেন, ‘‘ভাল লাগছে ভেবে যে এখনও তুমি আছ ডাকবাক্স।’’
এখনও নিয়মিত ডাকবাক্স থেকে ডাক সংগ্রহ করেন পিয়নেরা। তেমনই এক কর্মী বাবুল দাস। বেশির ভাগ দিনেই আগরতলা ফায়ার ব্রিগেড চৌমহনী ও কোর্ট চত্বরের ডাকবাক্স খুলে দেখেন শুধুমাত্র কয়েকটা সরকারি চিঠিপত্র রয়েছে। বটতলা শিবমন্দিরের লাগোয়া বাক্স খুলে এক বার কোনও চিঠিই পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভিতরে ছিল দশ টাকা, পাঁচ টাকার নোট এবং কিছু খুচরো পয়সা। মুচকি হেসে বাবুল বললেন, ‘ডাকবাক্সের আলাদা পরিচিতি হয়তো মুছেই গিয়েছে। তাই মন্দিরের লাগোয়া বলে অনেকেই এর মধ্যে প্রণামী ঢেলে দিয়েছেন। সব টাকা মন্দিরে দিয়ে এসেছি।’’
১৯৮৪ সালে ডাককর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন বাবুল। চাকরিজীবনের শেষপ্রান্তে এসে বলছেন, এক পোস্ট অফিস থেকে অন্য পোস্ট অফিসে মেল ব্যাগ পৌঁছে দিতেন তিনি। আগরতলায় তখন অল্প কিছু ডাকবাক্স ছিল। কিন্তু তখন প্রত্যেক দিন চিঠির সংখ্যা থাকত অনেক বেশি। বাবুলের বক্তব্য, ‘‘চিঠি লেখার মাধ্যমে এক জন সমৃদ্ধ হন। ভাষার উপরে দখল বাড়ে।’’ এখন ইন্টারনেটের যুগে চিঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরল সামগ্রী।
বাবুলের কথায় সায় দিলেন বটতলায় দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক। বললেন এখন মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওয়টস্যাপ, মেল, সমাজমাধ্যমের নানা মঞ্চের মাধ্যমে যুক্ত। ফলে ডাক বিভাগের কাজ কমেছে। তবে আশার কথা হল, ডাক বিভাগও সময়ের সঙ্গে তাল রাখার চেষ্টা করছে। এখন ডাক বিভাগের কর্মীরা কুরিয়র সার্ভিসের কায়দায় পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)