Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Goa

Goa Assembly Election 2022 Result: গোয়ায় প্রথম লড়ে তৃণমূল পেল ৫% ভোট, হার মেনে নিয়ে জনসেবার প্রতিশ্রুতি

মমতা জানতেন, ভোটের ফলাফল দারুণ কিছু হবে না। বলেছিলেন, অচেনা মাটিতে যে তৃণমূলের প্রতীক চিনিয়ে দিতে পেরেছেন, সেটাও কম সাফল্যের নয়।

গোয়ায় ‘নতুন ভোর’-এর প্রচার করেছিল তৃণমূল।

গোয়ায় ‘নতুন ভোর’-এর প্রচার করেছিল তৃণমূল। ফাইল চিত্র।

সৈকত দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ১৬:৫৭
Share: Save:

মাত্র তিন মাস আগে গোয়ার ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল তৃণমূল। তবে বিজেপি এবং কংগ্রেসের লড়াইয়ের মধ্যে সৈকতরাজ্যে একটিও ঘাসফুল ফোটাতে পারলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রেরা। তিন মাসের প্রস্তুতিতে ৫ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছে গোয়া তৃণমূল। তবে তাদের জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি (এমজিপি) দু’টি আসন পেয়েছে।

তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ে পরাজিত হয়েছেন গোয়ার ‘প্রভাবশালী’ প্রার্থী চার্চিল আলেমাও। প্রাক্তন এনসিপি বিধায়ক চার্চিলকে তাঁর পুরনো কেন্দ্র বেনোলিম থেকেই প্রার্থী করেছিলেন অভিষেকরা। কিন্তু একদা গোয়ার ১৩ দিনের মুখ্যমন্ত্রীও হারলেন প্রায় ৪,০০০ ভোটে। তাঁর হাত ধরেই গোয়ায় খাতা খোলার আশা ছিল তৃণমূলের। চার্চিলের কন্যা ভালাঙ্কাও তৃণমূলের টিকিটে লড়ে হেরে গিয়েছেন নভেলিম কেন্দ্র থেকে। তবে এ বার গোয়াতে দু’টি আসন পেয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)।

গোয়ার ৪০টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। বাকি আসনে লড়েছে জোটসঙ্গী এমজেপি। যাদের সমর্থনে গত বিধানসভা ভোটে সরকার গড়েছিল বিজেপি। গোয়ার ফলাফলের পর কলকাতায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘গোয়ায় আমরা সবেমাত্র পা রেখেছি। এই সামান্য সময়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা, দলের প্রতীক চেনানোই ছিল বড় কথা। সেটা আমরা সন্তোষজনক ভাবেই করতে পেরেছি।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর কংগ্রেসের উচিত আয়নায় নিজেদের মুখ দেখা!’’

পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে গোয়াবাসীর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন গোয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হতেই একটি বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে এই জনাদেশ গ্রহণ করছি। প্রতিটি গোয়াবাসীর আস্থা এবং ভালবাসা অর্জনের জন্য আমরা আরও কঠোর পরিশ্রম করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যত সময়ই লাগুক না কেন, আমরা এখানেই থাকব এবং গোয়ার মানুষের সেবা করে যাব।’

২০২১ সালে বাংলার বিধানসভা ভোটে মোদী-শাহর জুটিকে আটকে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয় বার মমতা পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যিনি গুরুত্ব দিয়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন বাংলার বাইরে দলের বিস্তারে। সেই সারিতে প্রথমে ছিল বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরা, তার পর গোয়ার বিধানসভা ভোট।

গোয়ার গুরুত্ব বোঝাতে স্বয়ং মমতা একাধিক বার গিয়েছেন পশ্চিম ভারতের সৈকত রাজ্যে। তাঁর প্রচারে শোনা গিয়েছিল গোয়ার মহিলা এবং মৎস্যজীবী ভোটারদের বিশেষ গুরুত্বের কথা। বারবার গোয়ায় গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকও। পাশাপাশিই, আবার কংগ্রেস ও অন্যান্য দল থেকে গোয়া তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন একাধিক নেতা। যাঁদের অন্যতম গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা লুইজিনহো ফালেইরো। গোয়াকে যে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝাতে ফালেইরোকে রাজ্যসভার সাংসদ করে তৃণমূল।

তবে ভোটের ফলাফল যে দারুণ কিছু হবে না সে ইঙ্গিত মমতার কাছে ছিলই। তাই গত১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ার ভোট চলাকালীন তিনি বুঝিয়েছিলেন, গোয়া নিয়ে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী হলেও ভোটে জয়-পরাজয় লেগেই থাকে। তবে মাত্র তিন-চার মাসের মধ্যে অচেনা মাটি গোয়ার ঘরে ঘরে যে তাঁরা তৃণমূলের প্রতীক চিনিয়ে দিতে পেরেছেন, সেটাও কম সাফল্য নয়।

অন্য দিকে, গোয়ায় মাটি কামড়ে থাকা অভিষেক যেমন এক দিকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছেন, তেমনই ২০১৭ সালে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েও গোয়ায় সরকার গড়তে না-পারা কংগ্রেসকে বিঁধতে ছাড়েননি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রত্যেক জয়ী বিধায়ক মাত্র ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিজেদের আত্মা বিক্রি করেছেন।’’ অভিষেক এ-ও বলেছিলেন যে, তৃণমূল গোয়ায় ভোট লড়ার কথা ঘোষণার পরই ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই তাঁর বাড়িতে অন্তত ১০ বার ইডি-র অফিসারদের পাঠানো হয়েছে। অভিষেক সরাসরিই বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল ও তার জোটসঙ্গী গোমন্তক পার্টি ছাড়া অন্য কোনও দলে ভোট দেওয়া মানেই আখেরে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়া।’’ তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, ভোটের ফলাফল যা-ই হোক, গোয়া থেকে তৃণমূল সরবে না। বরং সংগঠন আরও মজবুত করে আগামিদিনে আরও শক্তিশালী হিসেবে সৈকতরাজ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে তাঁরা। ভোটের ফলাফলের পর সেই কথাটাই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE