দলাই লামার উত্তরাধিকার বিতর্কে অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত সরকার। শুক্রবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই প্রসঙ্গে জানান, কারও ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরণের বিষয়ে কথা বলে না ভারত। শুধু তা-ই নয়, এই বিষয়ে ভারত কোনও অবস্থানও নেয় না বলে জানান রণধীর।
দলাই লামার উত্তরসূরি-বিতর্ক নিয়ে প্রশ্নে শুক্রবার রণধীর বলেন, ‘‘আমরা দলাই লামার প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে তাঁর দেওয়া বিবৃতি দেখেছি।’’ তার পরেই তিনি স্পষ্ট করেন, ভারত সরকার এই ধরনের ধর্মীয় বিষয়ে নিজেকে জড়ায় না। রণধীরের কথায়, ‘‘সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে ভারত সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’’
পঞ্চদশ দলাই লামা মনোনয়ন নিয়ে চিন এবং চতুর্দশ দলাই লামার মধ্যে চাপানউতোর চলছে। গত বুধবার দলাই লামা তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়নের বার্তা দিয়েছেন। ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসিত সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মগুরু বলেছেন, ‘‘পরবর্তী দলাই লামার মনোনয়নের দায়িত্ব গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের। এই প্রক্রিয়ায় বাইরের কাউকেই হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।’’ যদিও চুপ নেই চিনও। সে দিনই শি প্রশাসন জানায়, চিনের অনুমোদন ছাড়া দলাই লামার মনোনয়ন হবে না!
তার পরের দিনই, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রিজিজু বলেন, “উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রচলিত নিয়ম মেনে এবং বর্তমান দলাই লামার ইচ্ছানুসারেই হবে। পরবর্তী দলাই লামা কে হবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্য কারও নেই।” তারই জবাব দিয়েছে চিনও। শুক্রবার রিজিজুর মন্তব্যের বিষয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং জানান, ভারতের উচিত চতুর্দশ দলাই লামার চিন-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা। শুধু তা-ই নয়, তিব্বত (চিনে জিজাং নামে পরিচিত) সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন করা। মাওয়ের কথায়, ‘‘ভারতের উচিত তার কথা এবং কাজে সতর্কতা অবলম্বন করা। তিব্বত সম্পর্কিত চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করাই ভাল। এতে চিন এবং ভারতের সম্পর্ক উন্নতির উপর প্রভাব পড়তে পারে।’’ ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই দলাই লামা নিয়ে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, প্রায় ছ’দশক আগে চিন অধিকৃত তিব্বত থেকে গোপনে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন চতুর্দশ দলাই লামা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪! তাঁর সঙ্গেই চিন-অধিকৃত তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন পরিজন ও অনুগামীরা। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা-সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন কয়েক হাজার তিব্বতি বৌদ্ধ।