প্রচলিত নিয়ম মেনে বৌদ্ধ ধর্মগুরু চতুর্দশ দলাই লামার উত্তরসূরিকে বেছে নেওয়া হবে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বর্তমান দলাই লামাই। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিষয়ে অন্য কারও কোনও অধিকার নেই। মনে করা হচ্ছে, রিজিজুর মন্তব্যে আদতে নয়াদিল্লির মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। চিনকে নিশানা করেই এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। তবে নির্দিষ্ট কারও নাম করেননি তিনি। বলেছেন, “উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রচলিত নিয়ম মেনে এবং বর্তমান দলাই লামার ইচ্ছানুসারেই হবে। পরবর্তী দলাই লামা কে হবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্য কারও নেই।”
আগামী ৬ জুলাই ৯০ বছরে পা দেবেন বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা। তার আগেই হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসে তিনি তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে। এই আবহেই চিনের শি জিনপিঙের সরকার হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, বেজিঙের অনুমোদন ছাড়া পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়ন হবে না! স্বেচ্ছানির্বাসিত বৌদ্ধ ধর্মগুরু অবশ্য বলেছেন, ‘‘পরবর্তী দলাই লামার মনোনয়নের দায়িত্ব গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের। এই প্রক্রিয়ায় বাইরের কাউকেই হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।’’ রবিবার দলাই লামার জন্মদিনে হিমাচলে উপস্থিত থাকবেন রিজিজু এবং আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীবরঞ্জন সিংহ।
২০১৯ সালে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চতুর্দশ দলাই লামা তেনজ়িং গ্যাৎসো জানিয়েছিলেন, চিন বা চিন-অধিকৃত তিব্বত নয়, তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত হবেন ভারত থেকেই। তার পরেই বৌদ্ধধর্মের সর্বোচ্চ গুরুর কুর্সি ঘিরে তৎপরতা বাড়িয়েছে একদলীয় চিনের কমিউনিস্ট শাসকবর্গ। সম্প্রতি জিনপিং তিব্বতি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পাঞ্চেত লামার সঙ্গে বৈঠক করেছে। দলাই লামাপন্থীদের কোণঠাসা করতেই এই কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। দলাই লামাপন্থীরা অবশ্য চিন নিযুক্ত ওই পাঞ্চেত লামাকে স্বীকৃতিই দেন না। সম্প্রতি ধর্মশালায় তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ডেপুটি স্পিকার ডোলমা শেরিং তেখাং বলেছিলেন, “চিন আমাদের প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করতে চাইছে। রাজনৈতিক কারণেই এটা করছে।” দলাই লামার উত্তরসূরি মনোনয়নের দায়িত্ব যে কোনও ভাবেই তাঁরা বেজিঙের হাতে ছাড়বেন না, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়েছিলেন শেরিং।
প্রসঙ্গত, প্রায় ছ’দশক আগে আগে চিন অধিকৃত তিব্বত থেকে গোপনে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন চতুর্দশ দলাই লামা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪! তাঁর সঙ্গেই চিন-অধিকৃত তিব্বত ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরিজন ও অনুগামীরা। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা-সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন কয়েক হাজার তিব্বতি বৌদ্ধ।