প্রতীকী ছবি।
সময়সীমা বেঁধে রীতিমতো নোটিস জারি করে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আইন মেনে আয়-ব্যয়ের তথ্য না-দেওয়ায় সারা দেশে লক্ষাধিক কোম্পানিকে বাতিল করে দিল কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে বাতিল কোম্পানির সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। একই সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যায় কোম্পানি ডিরেক্টরদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম দু’দফায় ওই সব কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে। পরবর্তী ধাপে আরও অনুসন্ধান হবে বলে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক সূত্রের খবর। এই সিদ্ধান্তকে কার্যত নোট বাতিলের অনুসারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কর্পোরেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কেন? ২০১৬ সালের নভেম্বরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাতিল করা হয় ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। তার পরে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক দেশে ভিন্ন ভিন্ন রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ (আরওসি)-এর অধীনে নথিভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে আইন না-মানার অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ১৫ হাজারের বেশি কোম্পানির অনুমোদন ‘স্ট্রাক-অফ’ বা বাতিল করা হয়েছে। কর্পোরেট মহলের ব্যাখ্যায়, এর অর্থ, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি মন্ত্রকের তালিকায় আর নথিভুক্ত থাকবে না। ফলে তাদের অস্তিত্বও আর থাকছে না। এই প্রক্রিয়া যখন শেষ হবে, তখন গোটা দেশে বন্ধ করে দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা লক্ষাধিক হবে বলেই মনে করছেন কর্পোরেট বিশেষজ্ঞেরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোথায় কত কোম্পানি বাতিল
• পশ্চিমবঙ্গ আরওসি-র আওতায় ১৫ হাজারের বেশি।
• মুম্বই আরওসি-র আওতায় ৭৪ হাজারের বেশি।
• দিল্লি আরওসি-র আওতায় ৭৯ হাজারের বেশি।
• গোটা দেশে লক্ষাধিক।
• পশ্চিমবঙ্গ আরওসি-র আওতায় কালো তালিকাভুক্ত ডিরেক্টর ২৩ হাজারের বেশি।
• গোটা দেশে লক্ষাধিক।
সূত্র: কর্পোরেট মন্ত্রক
কর্পোরেট কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, কর্পোরেট মন্ত্রকে বহু কোম্পানি নথিবদ্ধ থাকলেও তাদের একটা বড় অংশের গতিবিধি দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে আসেনি। তার কারণ খুঁজতে গিয়ে সব কোম্পানিকে ৩০ দিন সময় দিয়ে নোটিস পাঠায় মন্ত্রক। সেই নোটিসে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৬ অর্থবর্ষের আয়-ব্যয়ের তথ্য (অ্যানুয়াল রিটার্ন ব্যালান্স শিট) দাখিল করতে হবে। যে-সব কোম্পানি তথ্য পেশ করেছিল, নথি যাচাই করে তাদের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু যে-সব কোম্পানি সেই নোটিস মানেনি, কোম্পানি আইনের আওতায় তাদের বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্পোরেট মন্ত্রক।
কর্পোরেট বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই ধরনের কোম্পানিকে সাধারণত ‘মানি সাইফন’ বা অসাধু উদ্দেশ্যে টাকা সরানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে তার থেকেই তথাকথিত কালো টাকার জন্ম হয়, যা সব সময় আতসকাচের তলায় আনা যায় না। সৎ পথে কাজ হয় না বলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসেব দাখিল করতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে সেই হিসেব মন্ত্রকের কাছে পেশ করা হয় না। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘সৎ পথে কাজ হয় না বলেই কোম্পানিগুলি অনুসন্ধানের তথ্য জমা দিতে গড়িমসি করে। তাই সেগুলিকে বাতিল করা হয়েছে। এক বার বাতিল হয়ে গেলে সেই কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে টাকা সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে না। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফা মিলিয়ে বহু কোম্পানি বাতিল হয়েছে। শুরু হচ্ছে তৃতীয় দফার প্রক্রিয়া।’’
একই সঙ্গে বেশ কয়েক হাজার কোম্পানি-ডিরেক্টরকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাঁদের পাঁচ বছরের জন্য নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে কর্পোরেট মন্ত্রক। গোটা দেশে সংখ্যাটা লক্ষাধিক। পশ্চিমবঙ্গে এমন কোম্পানি-ডিরেক্টরের সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। ২০১৩-১৬ অর্থবর্ষের মধ্যে কোম্পানিগুলি বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসেব দাখিল করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। এক কর্পোরেট বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগামী পাঁচ বছর কোনও কোম্পানিতে ডিরেক্টর হিসেবে থাকতে পারবেন না। এমনকি শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাঁদের পক্ষে নতুন কোম্পানিতে কাজ করা কঠিন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy