মাস ছয়েক আগেই কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-কে নিষিদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তখন তা গ্রাহ্য হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ ও অসম সংলগ্ন ভুটান সীমান্তে সন্ত্রাসমূলক গতিবিধি বেড়ে যাওয়ায় আজ কেএলও-কে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করল কেন্দ্র। এর ফলে ভবিষ্যতে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট)-তে মামলা রুজু করতে পারবে পুলিশ।
গত ডিসেম্বর মাসে জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরণ ও তার পর জানুয়ারি মাসে উত্তরবঙ্গে ও নমনি অসমে বাঙালিদের উপর লাগাতার হামলার হুমকি দিয়েছিল কেএলও। লোকসভা ভোটের আগে ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় ও অপহরণের অভিযোগও ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। ওই অর্থ অস্ত্র কেনা ও উত্তরবঙ্গে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। দলের সম্পাদক মালখান সিংহ ওরফে মাধব মণ্ডল গ্রেফতার ও এক সময়ের কম্যান্ডার-ইন-চিফ মিল্টন বর্মা মূলস্রোতে ফিরে এলেও দলীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ আত্মগোপন করে রয়েছেন। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এঁরা পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের মাটি শক্ত করছেন বলে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেন গোয়েন্দারা। তার পরেই তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লেখে রাজ্য।
সে সময়ে কেন্দ্র ওই দাবি মানতে চায়নি। কিন্তু সম্প্রতি অসম সীমান্তে কেএলও-র তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় তারাও একই দাবি জানায়। দুই রাজ্যের তরফেই এই প্রস্তাব আসার পর কেএলও-কে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এর ফলে যেমন আগামী দিনে ধৃত কেএলও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি ওই সংগঠন বা এদের শাখা সংগঠনগুলি প্রকাশ্যে এ দেশে কোনও কাজকর্ম চালাতে পারবে না।
রাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে তৎপর রয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। তাদের সঙ্গে কেএলও জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তাঁরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে পুলিশি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ে কেএলও। অনেক সময়েই পশ্চিমবঙ্গ বা অসমে ধরপাকড় হলে কেএলও জঙ্গিরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিত। কিন্তু হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এক দিকে যেমন মৌলবাদী সংগঠন, তেমনই শুরু থেকেই আলফা নেতৃত্বের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে চলেছে কেএলও। পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি ও অসমের চারটি (মতান্তরে সাতটি) জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি জানিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রথম আন্দোলন শুরু করে সংগঠনটি। কিছু দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও পরবর্তী সময়ে হিংসার আশ্রয় নেয় কেএলও। তাদের মদত দিতে এগিয়ে আসে আলফা।
গোয়েন্দাদের মতে, প্রথমে রাজ্যের দাবি থাকলেও পরে পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে সরব হয় কেএলও। পিছনে মূল উৎসাহদাতা আলফা নেতা পরেশ বরুয়া। এক গোয়েন্দা কর্তার মতে, “আলফা জঙ্গিরা সব সময় উত্তরবঙ্গে ‘সেফ করিডর’ চায়। যাতে তারা অনায়াসে বাংলাদেশ বা ভুটানে পালাতে পারে। এই কাজে আলফাকে সাহায্য করে এসেছে কেএলও।” আলফা ছাড়াও তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি)-র মতো উত্তর-পূর্বের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে। সম্প্রতি অসমে প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে মাওবাদীরা। তাদের সঙ্গেও কেএলও-র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাক আইএসআইয়ের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে ধৃত কেএলও জঙ্গিরা। জানা গিয়েছে, মায়ানমারের একাধিক জঙ্গি সংগঠনও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy