পহেলগাঁও, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায় রাজি কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের দাবি মেনে রবিবার সর্বদল বৈঠকের পর জানালেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে সর্বভারতীয় স্তরের বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সূত্রের খবর, সেখানে আসন্ন অধিবেশনে মূলত চারটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে চেপে ধরতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। এক, পহেলগাঁও কাণ্ড। দুই, তার পরবর্তীতে ‘অপারেশন সিঁদুর’। তিন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা নিয়ে ট্রাম্পের ভূমিকা এবং চার, বিহারে ভোটার সমীক্ষা।
সেই আবহে রবিবার সর্বদল বৈঠক হয়। পরে রিজিজু বলেন, ‘‘সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী আমরা। সংসদ যাতে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্য শাসক-বিরোধী সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়।’’
প্রসঙ্গত, শনিবার কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর পৌরোহিত্যে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক বসেছিল। দিল্লির ১০, জনপথ থেকে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, মোট ২৪টি বিরোধী দলের নেতারা শনিবারের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি-সহ বিরোধী দলগুলির নেতারা।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমস্ত বিরোধী দলই কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তাদের বক্তব্য, পহেলগাঁও কাণ্ড এবং তার পরবর্তী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে কেন্দ্র দেশের মানুষকে এখনও অন্ধকারে রেখেছে। আদৌ কী ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে দেশের মানুষের মনে ধোঁয়াশা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কিছুই স্পষ্ট করে জানায়নি। সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুললেও তাতে কর্ণপাত করেনি বিজেপি। ফলে বাদল অধিবেশনে এ নিয়েই নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে চেপে ধরতে চাইছে বিরোধীরা।
সূত্রের খবর, ভারত-পাক সংঘর্ষের আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছিলেন, তা নিয়েও বাদল অধিবেশনে সরব হতে চলেছে বিরোধীরা। কী ভাবে ট্রাম্প এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন এবং তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কেন নীরব, সে প্রশ্ন তোলা হবে বিরোধীদের তরফে। রবিবার রিজিজু বলেন, ‘‘সরকার নিজের মতো করে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেবে।’’
সূত্রের খবর, ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে তৃণমূলের অভিষেক বলেছেন, এখন ভারতের এমন অবস্থা হয়েছে যে দেশের মানুষ অন্ধকারে। কেন্দ্রীয় সরকার কিছুই জানাচ্ছে না। ট্রাম্পের সমাজমাধ্যম দেখে দেশের মানুষকে সব জানতে হচ্ছে! প্রসঙ্গত, পহেলগাঁও এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। তেমনই একটি দলে ছিলেন অভিষেকও। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সহ এশিয়ার পাঁচটি দেশে গিয়েছিল অভিষেকের সেই দল। সূত্রের খবর, বিদেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কী লাভ হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে সেই প্রশ্নও তুলেছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক বলেছেন, বিদেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কি আদৌ ভাল কিছু হল? ক’টা দেশ ভারতের পক্ষ নিল? এশিয়ার কোনও দেশ তো পাকিস্তানের নাম করে সমালোচনা পর্যন্ত করল না।
এই বিষয়গুলির পাশাপাশি বিহারের ভোটার সমীক্ষা নিয়েও বাদল অধিবেশনে প্রশ্নের ঝড় তুলতে চায় ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত দলগুলি। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং নেপথ্যে বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ তুলে সরব হতে চায় বিরোধী দলগুলি। ইতিমধ্যেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা এ নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে সরব হয়েছেন। তবে সংসদের বাদল অধিবেশনে সংগঠিত ভাবে ভোটার সমীক্ষার বিরোধিতা করতে চলেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।