Advertisement
E-Paper

ধর্মগুরুকে ধরতে ধুন্ধুমার, আহত ২০০

স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে আদালতে হাজির করার সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হরিয়ানায় হিসারের বারওয়ালায় ধর্মগুরু রামপালের অনুগামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল পুলিশ। অভিযোগ উঠল সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলারও। দিনের শেষে রামপালকে হাতে পায়নি প্রশাসন। উল্টে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ সিংহ খাট্টারের সরকার। একটি খুনের মামলায় ৪২ বার হরিয়ানার বিভিন্ন আদালতের সমন অগ্রাহ্য করেছেন রামপাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
আশ্রমের বাইরে রামপালের এক ভক্তকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার।

আশ্রমের বাইরে রামপালের এক ভক্তকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার।

স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে আদালতে হাজির করার সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হরিয়ানায় হিসারের বারওয়ালায় ধর্মগুরু রামপালের অনুগামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল পুলিশ। অভিযোগ উঠল সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলারও। দিনের শেষে রামপালকে হাতে পায়নি প্রশাসন। উল্টে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ সিংহ খাট্টারের সরকার।

একটি খুনের মামলায় ৪২ বার হরিয়ানার বিভিন্ন আদালতের সমন অগ্রাহ্য করেছেন রামপাল। তাই ক্ষুব্ধ পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাঁকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে অবশ্যই কোর্টে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়েই এখন বিপাকে মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার সরকার। পরিস্থিতি সামলাতে ১৪ কোম্পানি সিআরপি আনাতে হয়েছে তাদের। তা সত্ত্বেও এখনও রামপালকে হাতে পায়নি প্রশাসন। উল্টে আজ বারওয়ালায় আশ্রমের সামনে সংঘর্ষে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হওয়ায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুলিশের দিকে। হরিয়ানায় হিসারের বারওয়ালায় রামপালের ১২ একরের আশ্রমটি নামে ধর্ম প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার সুরক্ষাব্যবস্থা বহুস্তরীয়। বহুতল ওই আশ্রমের সামনে ৫০ ফুট উঁচু পাঁচিল। প্রবেশ পথে সর্বক্ষণ কড়া পাহারা।

এখন পাঁচিলের সামনে খোলা জমিতে পুলিশের মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাহিনী। পরনে কালো পোশাক, হাতে লাঠি, হকি স্টিক, রবারের ঢাল। তাদের ঠিক পিছনে বাড়ির মূল ফটকের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুরুষ ভক্তেরা। তাঁদের পিছনে রয়েছেন মহিলারা। সকলেই সশস্ত্র। পুলিশের দাবি, ভিড়ের হাতে পেট্রোল বোমা বা অ্যাসিডই নয়, বন্দুকও রয়েছে। আবার ছাদের ভিড়ের মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। রামপালকে কিছুতেই পুলিশের হাতে তুলে দিতে রাজি নন তাঁর অনুগামীরা।

আজ রামপালকে গ্রেফতার করার অভিযান শুরু হতেই তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে হরিয়ানা পুলিশ ও আধাসেনা। বুলডোজার দিয়ে পুলিশ আশ্রমের সামনের পাঁচিলটি ভাঙার চেষ্টা করলে সেটি জ্বালিয়ে দেন রামপালের অনুরাগীরা। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পুলিশ ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে গুলি ও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। যাতে আহত হন বেশ কিছু পুলিশকর্মী। গোটা এলাকাটি কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে বার বার কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। আশ্রম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশ মহিলা ও শিশুদের উপরে লাঠি চালিয়েছে। গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে সে কথা মানতে চায়নি পুলিশ। আশ্রমের সামনে ভিড়কে হটিয়ে দিতে পারলেও আজ রাত পর্যন্ত আশ্রমের ভিতরে ঢুকতে পারেনি পুলিশ। গোটা ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন। বেশ কয়েক জন সাংবাদিককে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। আশ্রমের মুখপাত্রের দাবি, রামপাল থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন না। তিনি আদালতে হাজিরা দেবেন। কিন্তু প্রশাসন বলপ্রয়োগ করে তাঁকে ধরে নিয়ে যেতে পারে না।


স্বঘোষিত ধর্মগুরু।

অনুগামীরা রামপালকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বলে আশ্রম কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও বাস্তব আলাদা বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে আসা কয়েক জন রামপাল ভক্ত জানিয়েছেন, আশ্রমের ভিতরের বেশির ভাগ মানুষই বেরিয়ে আসতে চান। কিন্তু রামপালের নিজস্ব বাহিনী তাঁদের আটকে রেখেছে। আটকে পড়া মানুষের মধ্যে রয়েছেন অনেক মহিলা ও শিশু। পুলিশ অফিসারদের মতে, মহিলা ও শিশুদের দিয়ে ‘মানব ঢাল’ তৈরি করেছে রামপাল-বাহিনী। তাতে পুলিশের কাজ আরও কঠিন হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি এস এন বশিষ্ঠ সাফ জানিয়েছেন, তাঁদের কাজ খুব কঠিন। গোলমালের মধ্যে রামপাল আদৌ ওই আশ্রমে আছেন কি না তা নিয়েই ধন্দ দেখা দিয়েছে। আশ্রমের মুখপাত্রের দাবি, রামপাল অসুস্থ। কোনও অজ্ঞাত স্থানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পুলিশের পাল্টা দাবি, রামপাল আশ্রমেই রয়েছেন। তা না হলে এমন কড়া প্রতিরোধ হত না।

সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠায় খাট্টার সরকারের সমস্যা বেড়েছে। তোপ দেগেছে বিরোধী কংগ্রেসও। খাট্টারের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি জহর যাদব বলেন, “দুভার্গ্যজনক ঘটনা। কী কারণে কার প্ররোচনায় এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের উপর হামলা চালানো সে বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। খতিয়ে দেখতে হবে।” ডিজি বশিষ্ঠ জানান, সাংবাদিকদের উপরে হামলা নিয়ে লিখিত অভিযোগ হলে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে এফআইআরের কথা বিবেচনা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে হরিয়ানা পুলিশকে নোটিস দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।

তবে আর পিছু হটতে রাজি নয় হরিয়ানা পুলিশ। ডিজি বশিষ্ঠ জানান, “রামপাল গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান থামবে না।”

ছবি: পিটিআই

haryana hisar rampal supporters attack 200 injured clashes police and rampal supporters clash court national news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy