Advertisement
১১ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

Abhishek Banerjee: জাতীয় রাজনীতিতে অভিষেকে গোয়ার ভোটে অল্পেই সন্তুষ্ট থাকতে হল অভিষেককে

অভিষেক ঠিক কী ভেবে গোয়ায় এসেছিলেন তা কাউকে বুঝতে দেননি। রাজা হয়ে সিংহাসনে বসার বদলে রাজাকে গুরুত্বপূর্ণ আসনের জন্য পদানত করাই কি লক্ষ্য ছিল তাঁর?

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

ঐন্দ্রিলা বসু সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ২০:০২
Share: Save:

গোয়ার বিধানসভা ভোট ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অভিষেক টেস্ট’।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষেকের দায়িত্বকে যদি তাঁর জাতীয় রাজনীতির কেরিয়ার বলে ধরে নেওয়া হয়, তবে গোয়া ছিল তাঁর প্রথম বড় পরীক্ষা। ঘরের মাঠে একশোয় একশো পাওয়ার পর বড় টিমে খেলার সুযোগ।

তবে এই অভিষেকে খেলোয়াড় বড় রান পেলেন কি না, সেটা বিচার্য ছিল না। দেখার ছিল, বড় মাঠে তিনি টেনে দৌড়তে পারবেন, না কি অল্প ছুটেই হোঁচট খাবেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভার ফল ঘোষণার পর সমালোচকরা যা-ই বলুন, তৃণমূল মনে করছে স্বল্প সময়ে গোয়ায় যা পাওয়া গিয়েছে, তা নেহাত কম নয়। কিন্তু অভিষেকও নিজেও কি তা-ই মনে করছেন?

জানার উপায় নেই। কারণ, অভিষেকের তরফে কোনও বিবৃতি বা টুইট রাত পর্যন্ত করা হয়নি। তবে গোয়া তৃণমূল টুইট করে ‘জনাদেশ’ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ধরে নেওয়া যেতে পারে, সেটিই অভিষেকের প্রতিক্রিয়া।

গোয়ায় ভোটের প্রচারের জন্য বারবার কলকাতা থেকে পানজিমে ছুটে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ভোটগণনার ৪৮ ঘন্টা আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করবেন বলে। তৃণমূলের প্রার্থীদের পাশে থাকবেন বলে। এমনকি, এ-কথাও বলেছিলেন যে, ফলাফল যা-ই হোক, তৃণমূল গোয়ার ময়দান ছাড়বে না। অভিষেক কি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন যে, গোয়ায় তাঁর প্রত্যাশা পূর্ণ হচ্ছে না?

গোয়ায় সরকার গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজে নেমেছিলেন অভিষেক। গত বছর অক্টোবরে কোচবিহারের দিনহাটায় উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে প্রথম গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের লড়াই করার ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘তিনমাসের মধ্যে গোয়ায় সরকার গড়বে তৃণমূল।’’ তবে পরে গোয়ায় প্রথম সফরে গিয়ে অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘তৃণমূল যদি গোয়ায় না-ও জেতে তবে ক্ষতি নেই। তারা প্রধান বিরোধী শক্তি হবে। মাঝামাঝি কিছু নয়।’’

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

গোয়ার অল্প পরিসর আর আবেগপ্রবণ গোয়ানদের, মৎস্যপ্রেম, সঙ্গীতপ্রেম এবং ফুটবলপ্রেমের সঙ্গে বাংলা আর বাঙালিদের মিল রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু ছোট এবং প্রান্তিক রাজ্য হলেও গোয়ার রাজনীতি সহজ নয়। সম্ভবত সে কারণেই তৃণমূলের কিছু নেতাকে বলতে শোনা যাচ্ছিল, গোয়াতে পাঁচটা আসন পেলেও অনেক। এমনকি, বুথফেরত সমীক্ষায় যখন তৃণমূল এবং মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির জোটকে গোয়ায় মোট পাঁচটি আসন দেওয়া হল, তখনও তৃণমূল বা অভিষেকের তরফে কোনও পাল্টা বক্তব্য আসেনি।

গোয়া বিধানসভার লড়াইয়ের পিছনে একটি অন্য লক্ষ্যও ছিল অভিষেকের। তৃণমূলের ‘আঞ্চলিক’ পরিচয় খণ্ডন করে দলকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ধূমধাম করে প্রচারের পর যখন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মাত্র ৭৭টি আসনে গুটিয়ে গেল, তখন দেশের মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে জ্বলজ্বল করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সাংগঠনিক বিস্তৃতির দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিষেক তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা এবং বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে তৃণমূলকে দেশের অন্যত্র পৌঁছে দেওয়ার। খাতায়কলমে জাতীয় দলের মর্যাদাপ্রাপ্ত তৃণমূলকে কার্যক্ষেত্রেও জাতীয় স্তরে নিয়ে গিয়ে ফেলা।

বিধানসভা নির্বাচনে সদ্য নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা অভিষেককে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন মমতা। দায়িত্ব নিয়েই অভিষেকও জানিয়ে দিয়েছিলেন, জাতীয় স্তরে বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাদখল নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা।

সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপে তৃণমূলের জন্য কিছু ‘সহজ এবং প্রান্তিক’ রাজ্য বেছে নিয়েছিলেন অভিষেক। শর্ত দু’টি। এক, বেছে নেওয়া রাজ্যের ক্ষমতায় থাকতে হবে বিজেপি-কে। দুই, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট মাথায় রেখে আকারে ছোট রাজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাতে অল্প সময়ে সাংগঠনিক কাজ সামলাতে অসুবিধা না হয়। সেই হিসেবেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের সঙ্গে আরবসাগরের তীরের গোয়াকেও বেছে নেন অভিষেক।

৩,০৭২ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট রাজ্যের লড়াই শুরুর সময় প্রচার করেছিলেন মমতা। গোয়ায় তৃণমূলের প্রচারের নামকরণও করেছিলেন নেত্রী নিজেই। গোয়ায় তৃণমূলের প্রচারের স্লোগান ছিল ‘গোয়েঞ্চি নবি সকাল’। অর্থাৎ, ‘গোয়ার নতুন প্রভাত’। কিন্তু গোয়ার প্রচার চলাকালীনই তৃণমূলের অন্দরে টানাপড়েন শুরু হয়।

অসমর্থিত সূত্রের খবর, সেই টানাপড়েনের জোরে অভিষেক তখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট ছিল গোয়ায়। অভিষেক না কি ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, তার পরেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে নিস্তার চেয়ে নেবেন। যদিও তিনি প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও কথা বলেননি। পদও ছাড়েননি। জল্পনা যা-ই হোক, অভিষেক গোয়ায় তাঁর দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। বারংবার গোয়ায় গিয়েছেন। গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। নিজে সভা করেছেন। এমনকি, মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পুজোও করেছেন।

গোয়ায় তৃণমূলের আসন না পাওয়া বা মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশে, তখন অন্য আরেকটি মহল অভিষেকের গোয়া-উদ্যোগকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলতে নারাজ। তাঁদের মতে, দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে ৫ শতাংশ ভোট তো টানতে পেরেছেন অভিষেক। বাংলা থেকে ২,১৩৫ কিলোমিটার দূরের একটি রাজ্যের ৫ শতাংশ মানুষকে জোড়াফুলের প্রতীক চেনাতে তো পেরেছেন। তা-ই বা কম কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee TMC Goa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE