টানা আধঘণ্টার সেই টানাপড়েনের দৃশ্য এখনও পর্যন্ত দেখেছেন প্রায় ৫৪ লক্ষ মানুষ।
যা দেখে চমৎকৃত প্রবীণ সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলোই হচ্ছে সাংবাদিকতার নিশান। এই হামাগুড়ি দেওয়ার সময় দু’টি বাচ্চা মেয়ে যে সাহস আর দক্ষতা দেখাল, সেটা অভাবনীয়। ওদের দু’জনকেই স্যালুট।’’ অশোক আরও বলছেন, ‘‘এরাই তো ইস্যুটা দিল রাজনীতিকদের। যেখানে রাহুলকে যেতে দিল না যোগীর পুলিশ, এরা সেখানে পৌঁছল। শুধু পৌঁছল না। খুঁড়ে বার করে আনল। ঢুকে পড়ার সাহস, বলায় আন্তরিকতা আর রোখা ভঙ্গি। উত্তরপ্রদেশ সরকার যে কিছুটা হলেও পিছু হটে সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিল, তাতে তো এদেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা থেকে গেল।’’
পরদিন যখন নাছোড় প্রতিমা গিয়ে পৌঁছেছেন নির্যাতিতার বাড়ির দাওয়ায়, তখনও দিল্লি থেকে হাথরসের পথে রওনা হতে পারেননি রাহুল-প্রিয়ঙ্কা।
আরও পড়ুন:হাথরস-কাণ্ডে ধর্ষণের অভিযোগ মুছতে পিআর সংস্থার দ্বারস্থ যোগী
তনুশ্রী-প্রতিমা হাথরসের পাতায় লিখেছেন নতুন ইতিহাস। ঘটনাস্থলে আগে পৌঁছবেন রাজনীতির কারবারিরা। আর তাঁদের পিছু পিছু পৌঁছবে সাংবাদিক। এই ছিল এই দেশের দস্তুর। তনুশ্রী-প্রতিমা সেই ব্যাকরণ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা সেখানে পৌঁছেছেন, যেখানে পৌঁছতে পারেননি রাহুল-প্রিয়ঙ্কার মতো আপাত-সর্বশক্তিমান রাজনীতিকরাও!
ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। শুধু কখনও কখনও তার পথের অভিমুখ বদলে যায়।
৪৩ বছর আগে ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে বিহারের নালন্দা জেলার বেলচি গ্রামে দলিত গণহত্যার পরে স্বজনহারা পরিবারগুলিকে ভরসা দিতে ছুটে গিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত ইন্দিরা গাঁধী। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা কাদাভর্তি রাস্তায় হেঁটে, হাতির পিঠে জলাজমি পেরিয়ে পৌঁছেছিলেন ঘটনাস্থলে। তখনও সেখানে পৌঁছয়নি জাতীয় স্তরের কোনও সংবাদমাধ্যম।
আরও পড়ুন: প্রিয়ঙ্কার রণে ‘দাদির তেজ’, পোশাকে টান দিল ‘বীরপুরুষ’
তার মাস চারেক আগেই লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। দলের অন্দরেও ইন্দিরার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাঁর বিরোধীরা। কিন্তু বিহারের সেই প্রত্যন্ত গ্রামে কার্যত রাজনৈতিক পুনর্জন্ম হয়েছিল ইন্দিরার। কর্নাটকের চিকমাগালুর লোকসভা উপনির্বাচনে জয় তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয়তার নতুন শিখরে। জরুরি অবস্থার স্মৃতি মুছে ফেলে ফের দিল্লির ক্ষমতায় পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
গত লোকসভা ভোটের আগে সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু হাথরস দেখাল, তিনি তাঁর ঠাকুমার চেয়ে এখনও অন্তত ৪৩ আলোকবর্ষ পিছিয়ে। দুই সাংবাদিকের মধ্যে যে অনমনীয়তা, যে জেদ দেখল গোটা দেশ, তার পাশে ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন পেশাদার রাজনীতিকরা।
আরও পড়ুন: হাথরসে সিবিআই, নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে কথা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীতে দীর্ঘসময় সাংবাদিকতা-করা বর্ষীয়ান আবার ভিন্নমত। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। এটা তো ওদের কাজেরই অঙ্গ। আসলে এখন কেউ আর তাদের কাজটা করছে না। তাই এরা যখন নিজের কাজটা মন দিয়ে করছে, তখন সেটাকেও একটা বিশাল ব্যাপার মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওদের বীরাঙ্গনা ইত্যাদি বলা হচ্ছে। আমি এর বিরোধী। একটা চাকরিকে কেন অযথা গৌরবাণ্বিত করতে যাব?’’