Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Hathras DM

ইতিহাসের ‘প্রবীণ’ ছাত্র যখন হাথরসের বর্তমান ‘ভিলেন’

প্রবীণ কুমার হলেন হাথরসের জেলাশাসক। এক সন্তানের পিতা প্রবীণ ২০১২ সালের ব্যাচের আইএএস অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন।

জেলাশাসক হওয়ার দেড় বছরের মাথাতেই প্রবীণের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

জেলাশাসক হওয়ার দেড় বছরের মাথাতেই প্রবীণের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
লখনউ শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৭
Share: Save:

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। তার মধ্যেই নিয়েছিলেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি। ২০১১ সালে পাশ করেন। তার পরের বছর ২০১২ সাল থেকেই প্রবীণ কুমার লক্সকর ‘সরকারি চাকুরে’। প্রবীণ কুমার নামেই যিনি আপাতত সারা দেশে খ্যাত।

বোঝা গেল না?

পরিচয়টা দিলে বোঝা যাবে। প্রবীণ কুমার হলেন হাথরসের জেলাশাসক। কোন হাথরস? যে হাথরসের নির্যাতিতার জন্য সুবিচারের দাবিতে উত্তাল গোটা দেশ। সেই সুবিচারের পাশাপাশিই উঠে আসছে প্রাক্তন শিক্ষক প্রবীণ কুমারের কীর্তি— নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে নাকি তিনি মুখ না-খোলার হুমকি দিয়েছেন। লাথি মেরেছেন নির্যাতিতার কাকাকে। অন্তত তেমনই অভিযোগ নির্যাতিতার পরিজনদের।

মুখে করোনারোধী মাস্ক। তার উপর দিয়ে রিমলেস চশমার আড়ালে দু’চোখ। স্থির। দৃঢ়নিবদ্ধ। গলায় কোনও তাপউত্তাপ নেই। সেই নিরুত্তাপ গলায় তিনি এই সে দিন পর্যন্তও বিবৃতি দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে। নিউজ চ্যানেলের মহিলা রিপোর্টারকে খেদিয়ে দেওয়ার সময় প্রশ্নের জবাবে প্রবীণের অধস্তন বলেছেন, ‘ডি এম সাহেবের নির্দেশেই’ ওই কাজ করছে পুলিশ-প্রশাসন। ‘সরকারি চাকুরে’ই বটে!

হাথরসে নির্যাতিতার বাড়ির কাছে প্রহরা পুলিশের। ছবি—পিটিআই।

ঘটনাচক্রে, রাজস্থানের আদি বাসিন্দা প্রবীণের প্রথম পোস্টিংই হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ২০১৯ সালে তিনি হাথরসের জেলাশাসকের দায়িত্ব পান।

জীবনের শুরুটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। রাজস্থানের জয়পুরের বাড়িতেই বাস ছিল তাঁর। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা মারা যান। সংসারের অভাব প্রকট হয়। সেই প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রবীণ। ২০০২-এ স্নাতক। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। তার পর শিক্ষকতায়। ২০০৫ থেকে শিক্ষকতা করেছেন প্রবীণ। রাজসমন্দ জেলায় শিক্ষকতা করার সময়ই আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। দূরশিক্ষায় হিন্দিতে স্নাতকোত্তরও করেন।

আইএএস হওয়ার সর্বভারতীয় পরীক্ষায় দেশের মধ্যে ১১৬ র‌্যাঙ্ক করেছিলেন প্রবীণ। পরীক্ষা পাশ করার পর এক এডুকেশন পোর্টালে জানিয়েছিলেন, হিন্দি মাধ্যমের ছাত্র হওয়ায় তাঁর আইএস পরীক্ষা পাশ করা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। নিজের ইংরেজিতে দক্ষতার উপরে যথেষ্ট আস্থা ছিল। আইএএস পাশ করার আগেই বিয়েটা সেরে ফেলেছিলেন।

এক সন্তানের পিতা প্রবীণ ২০১২ সালের ব্যাচের আইএএস অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন। ২০১৩-তে প্রশিক্ষণ শুরু হয় রায়বরেলীতে। প্রথম পোস্টিং উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। ২০১৪-র অগস্টে আলিগড়ের যুগ্ম ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজ শুরু করেন। ২০১৬ অবধি সেই পদেই ছিলেন। ২০১৬-র এপ্রিলে হন ললিতপুরের চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার। সেখানে দু’বছর কাজের পর রাজধানী লখনউয়ে বদলি হয় তাঁর। পঞ্চায়েত রাজের বিশেষ সচিব হিসেবে এক বছর কাজ করার পরেই। হাথরসের জেলাশাসক নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৯-এর মার্চ মাসে।

জেলাশাসক হওয়ার দেড় বছরের মাথাতেই তাঁর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। নির্যাতিতার পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়ার বদলে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার তাঁদের ভয় দেখানো ও দমন করার অভিযোগ উঠেছে এক সম্তানের জনক প্রবীণের বিরুদ্ধে। ১৯ বছরের দলিত তরুণীর মৃত্যুর পর সরগরম দেশের রাজনীতি। বিরোধী দলনেতা থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি— নির্যাতিতার পরিবারের কাছে শুক্রবার পর্যন্ত কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে শোনা যাচ্ছে নির্যাতিতার পরিবারকে ঠান্ডা গলায় প্রবীণ বলেছেন, ‘‘অর্ধেক মিডিয়া চলে গিয়েছে। বাকি অর্ধেক কাল চলে যাবে। শুধু আমরাই থাকব। বয়ান বদলাবেন কি না সেটা আপনাদের ব্যাপার।’’

যুগে যুগে, কালে কালে ইতিহাস এমন অনেক চরিত্র দেখেছে। যাঁরা নিজেদের ‘সরকারি চাকুরে’ পরিচয়কে অঙ্গবস্ত্রের মতো গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কোথাও না কোথাও গিয়ে তাঁদের কাছে জবাবদিহি চেয়েছে সময়। সময় বলেছে, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। করেনি। শুক্রবারই রাজস্থানে তাঁর আদি বসতবাড়ির সামনে জঞ্জাল ফেলে গিয়েছেন লোকজন। ঘৃণার জঞ্জাল।

প্রবীণ ইতিহাস পড়েছেন। প্রবীণ ইতিহাস পড়িয়েছেন। ইতিহাসের শিক্ষা তাঁর মনে আছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Praveen Kumar Hathras Gangrape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE