মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া নিয়ে করা মামলা আগামী ১১ নভেম্বরে শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটের দিন শীর্ষ আদালতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন, ২০২৩-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সংসদে এই আইনটি পাশ হওয়ার আগে, ওই বছরেরই মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই সংক্রান্ত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দলনেতাকে রাখা উচিত। নির্বাচন কমিশনকে শাসক দলের প্রভাব মুক্ত রেখে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিতেই শীর্ষ আদালত এই মতপ্রকাশ করেছিল। তবে নতুন আইন অনুযায়ী, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের বেছে নেওয়ার জন্য গঠিত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আর একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা অথবা লোকসভার সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতাকে রাখা হয়েছে। নতুন আইনে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন পূর্ণ মন্ত্রীকে জায়গা দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, এর ফলে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের চাবিকাঠি কেন্দ্রের শাসক দলের হাতে চলে গেল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর), কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর-সহ অনেকে এই নতুন আইনে আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান। তবে দীর্ঘ দিন থেকে এই মামলার শুনানি ঝুলে রয়েছে।
শীর্ষ আদালতে আজ বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের মামলার তালিকায় বিষয়টি ছিল। তবে সময়ের অভাবে এই মামলার শুনানি আজ হয়নি। এডিআরের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ মামলাটির উল্লেখ করে বলেন, বারবার আদালতের কাজের তালিকায় মামলাটির উল্লেখ থাকলেও শুনানি হচ্ছে না। একটি দিনে ৩-৪ ঘণ্টা ধরে মামলাটির শুনানি করার জন্য বিচারপতিদের অনুরোধ করেন তিনি। জানিয়ে দেন, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই নিজের বক্তব্য আদালতের সামনে পেশ করতে পারেন তিনি। প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য শুনে বিচারপতি সূর্য কান্ত জানান, ১১ নভেম্বর সকালে মামলার উল্লেখ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেদিন কম গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলি স্থগিত করে এই মামলাটি শুনতে পারে শীর্ষ আদালত।
তবে অতীতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নিয়োগের আগেও মামলাটি শুনতে রাজি হয়েছিল শীর্ষ আদালত। ওই পদে রাজীব কুমারের অবসর এবং জ্ঞানেশ কুমারের নিয়োগের আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির জন্য বলা হয়েছিল। তবে সেই দিন শুনানি হয়নি। পরে মামলাটি ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের কাজের তালিকায় রাখা হয়। ঠিক তার দু’দিন আগে,১৭ ফেব্রুয়ারিতেই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে বসেন জ্ঞানেশকুমার। জ্ঞানেশ কুমার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন, এই নিয়োগ শীর্ষ আদালতের অনুপ বারানওয়াল মামলার রায়ের বিরোধী। তবে ২০২৪-এর মার্চ মাসে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)