Advertisement
E-Paper

প্রকৃতির তাণ্ডবে তছনছ মধুচন্দ্রিমা

স্বপ্নের মধুচন্দ্রিমা এমন হবে, ভাবতেও পারেননি শ্রীরূপা। দু’জনে নীল জলে পা ডুবিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, সে হিসেব কষা হয়নি। মিনিট-সেকেন্ডের হিসেব রাখার কথাও তখন ছিল না। স্নিগ্ধ বাতাসেও ছিল একটা মাতাল করা গন্ধ।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
শ্রীরূপা ও রাকেশ।—নিজস্ব চিত্র

শ্রীরূপা ও রাকেশ।—নিজস্ব চিত্র

স্বপ্নের মধুচন্দ্রিমা এমন হবে, ভাবতেও পারেননি শ্রীরূপা।

দু’জনে নীল জলে পা ডুবিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, সে হিসেব কষা হয়নি। মিনিট-সেকেন্ডের হিসেব রাখার কথাও তখন ছিল না। স্নিগ্ধ বাতাসেও ছিল একটা মাতাল করা গন্ধ। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গিয়েছিল সব কিছু। বেপরোয়া ঝড়, আকাশভাঙা বৃষ্টি, উত্তাল সমুদ্র, অন্ধকার, বন্দিদশা, বায়ুসেনার কপ্টার—নবদম্পতির মধুচন্দ্রিমার সঙ্গে সব কিছু মিলেমিশে একাকার।

২৪ নভেম্বর বিয়ে হয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রাকেশ চন্দ্র এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শ্রীরূপা সরকারের। শুক্রবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে যখন যুগল নামলেন, মুখে একরাশ বিরক্তি। শ্রীরূপার কথায়, ‘‘দিন চারেক যা কাটল। মনে হচ্ছিল এর থেকে ঘরে বসে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু দেখা ভাল ছিল।’’ ১ ডিসেম্বর তাঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন আন্দামানে। প্রথম পাঁচটা দিন ছিল স্বপ্নের। দুঃস্বপ্নের শুরু তার পর থেকে।

পোর্ট ব্লেয়ার থেকে হ্যাভলক পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। তাঁদের প্রেমের গল্পে খলনায়কের আবির্ভাব নীল দ্বীপে। ৫ তারিখ ওঁরা নীলে পৌঁছন। আর সেখানেই গল্পে নতুন মোড়। শনিবার ফোনে শ্রীরূপা বলেন, ‘‘নৌকো করে যখন হ্যাভলক থেকে নীল দ্বীপে যাচ্ছিলাম তখন সমুদ্রের শান্ত রূপ একটু অচেনা লাগছিল। নৌকার এক প্রৌঢ় বলেই ফেললেন, ‘‘এ ঢেউ ভাল নয়।’’

শ্রীরূপারা নীলে পৌঁছনোর পরে, বিকেল থেকে রূপ বদলাতে শুরু করল আকাশের। শ্রীরূপা জানাচ্ছেন, রাতে হোটেলের ঘরের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, গাছগুলো যেন হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সেই যুদ্ধ দেখে ফুঁসছে সমুদ্র। ৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে এত জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল, জানলার কাঁচ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। যে ঢেউ দেখে পাশের জনের হাতটা ধরে উচ্ছ্বাসে চোখ-মুখ ভরে যাওয়ার কথা, সেই ঢেউই রক্ত হিম করে দিচ্ছিল। তবে তখনও জানা ছিল না, সেটা ছিল বিপর্যয়ের সূচনা মাত্র। ৭ ডিসেম্বর সকালে হোটেলের বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘরের বাইরে যাওয়ারও উপায় নেই। হোটেলের বাগানের গাছগুলো জলের তলায়। জেনারেটর রুমে এক হাঁটু জল। খাবার জলও দেওয়া হচ্ছিল হিসেব কষে। ফুরিয়ে আসছিল খাবার।

শুক্রবার সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বায়ুসেনা উদ্ধার করে শ্রীরূপাদের। সেই রাতেই কলকাতায় ফেরেন তাঁরা। হিসেব মতো, ৬ ডিসেম্বর দুপুরে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কলকাতায় ফিরে আসার কথা ছিল। শনিবার কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উঠেছেন শ্রীরূপা এবং রাকেশ। তবে বিপর্যয়ের ঘোর এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

শ্রীরূপা বলেন, ‘‘আর কোথাও যাওয়ার কথা এখন ভাবছি না।’’ তবে, রাকেশ ভাবছেন। পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছে। সামনের বছর কোনও একটা পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রামে হবে দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা।

Honeymoon Heavy rainfall Andaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy