—ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দূত নিয়োগের পর দিনই হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান সইদ সালাউদ্দিনের ছেলে সইদ শাহিদ ইউসুফকে গ্রেফতার করল এনআইএ। সন্ত্রাসে টাকা জোগানোর হাওয়ালা চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে আজ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কাল আলোচনাকারী নিয়োগ এবং তার পরেই এই গ্রেফতারের মধ্যে আপাত ভাবে কোনও সম্পর্ক নেই বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হলেও কাশ্মীরিদের প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের বার্তাটি স্পষ্ট। তা হলো, কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে আলোচনা চালানোর ব্যাপারে সরকার আন্তরিক, তবে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে ঢিলে দিতে রাজি নয় মোটেই।
কাশ্মীরে সন্ত্রাস ও বিক্ষোভ দমনে কড়া হতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে হাত পুড়িয়েছে মোদী সরকার। ভূস্বর্গে অশান্তি কমার বদলে বেড়েছে। কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের দিশাহীনতাই বরং সামনে উঠে এসেছে। এ বারে আলোচনার পথটিকে সামনে রাখার চেষ্টা করলেও কী ভাবে এগোনো হবে, সেটি অবশ্য এখনও স্পষ্ট করেননি সরকারের কোনও শীর্ষকর্তা।
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাক্তন প্রধান দীনেশ্বর শর্মাকে কেন্দ্রীয় সচিবের সমতুল মর্যাদা দিয়ে কাশ্মীরের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভার দেওয়া হয়েছে গত কাল। কয়েক মাস আগে তলে-তলে হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেও কেন্দ্রকে সরে আসতে হয়েছে সঙ্ঘের আপত্তিতে। আজ তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন্দ্রের এই দূত কি বিচ্ছিন্নতাকামী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন? এর জবাব এড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সেটা নির্ভর করছে দীনেশ্বর শর্মার উপরে। আলোচনাকারী হিসেবে তিনি কাদের সঙ্গে কথা বলবেন সেটা নিজেই ঠিক করবেন। রাজনাথের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কাশ্মীরের জন্য দূত নিয়োগ করে পাকিস্তানকে কী বার্তা দিতে চাইছে সরকার? এর জবাবও এড়িয়ে যান রাজনাথ।
তবে এরই মধ্যে জঙ্গিদের আর্থিক উৎসগুলি নির্মূল করার কাজ জোর কদমেই চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। সালাউদ্দিনের তৃতীয় ছেলে ইউসুফকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ বছরের পুরনো একটি মামলায়। এনআইএ-র তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সিরিয়ায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা গুলাম মহম্মদ বাটের থেকে হাওয়ালায় অর্থ পেয়েছিলেন ইউসুফ। এক বিবৃতিতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এ-ও জানিয়েছে যে, পাক জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য আইজাজ আহমেদ বাটের কাছ থেকেও অর্থ পেতেন ইউসুফ। অর্থের লেনদেন হতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কাশ্মীর থেকে পালিয়ে আইজাজ সৌদি আরবে ঘাঁটি গেড়েছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। সে-ই ইন্টারনেটে অর্থ পাঠানোর কোড জানিয়ে দিত ইউসুফকে।
জঙ্গিদের জন্য অর্থ জোগাড়ে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও এ বছর মার্চে ইউসুফকে পাকা চাকরি দেওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীরের কৃষি দফতরে। ৪২ বছর বয়সি ইউসুফ কৃষিতে স্নাতকোত্তর। তাই গ্রামীণ কৃষি সহায়কের কাজ দেওয়া হয় তাঁকে। পাশাপাশি, জঙ্গি-তহবিল সংক্রান্ত মামলায় শ্রীনগরেই তিন বার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে ১৬ অক্টোবর তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠায় এনআইএ। এক আত্মীয়কে নিয়ে ইউসুফ দিল্লি আসেন। জিজ্ঞাসাবাদের পরে আজ গ্রেফতার করা হলো তাঁকে।
২০১১ সালে দিল্লি পুলিশের দায়ের করা এই মামলাটিতে এ পর্যন্ত দু’টি চার্জশিট পেশ হয়েছে ৬ জনের বিরুদ্ধে। হুরিয়ত নেতা সইদ আলি শাহ গিলানির ঘনিষ্ঠ গুলাম আহমেদ বাট তাদের অন্যতম। ওই ৬ অভিযুক্তের মধ্যে ৪ জনই বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। সালাউদ্দিনকে ধরতে রেড কর্নার নোটিস জারি করা হয়েছে ২০১৪ সালে। হিজবুলের শীর্ষনেতার ছেলে গ্রেফতার হওয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠীটির মুখপাত্র সালিম হাসমি সংবাদংস্থার কাছে এর নিন্দা করে বলেছে, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে ইউসুফকে। এই কৌশলে কাশ্মীরের স্বাধীনতার লড়াইয়ে যুক্ত নেতাদের মনোভাব বদলানো যাবে না।’’ ইউসুফের গ্রেফতারির নিন্দা করেছে হুরিয়তও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy