Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কৃষক-দরদি সভাতেও প্রকট দলীয় কোন্দল

দলকে আন্দোলনমুখী করে তোলার মধ্যে দিয়ে যখন তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় হচ্ছেন রাহুল গাঁধী, তখন রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের রাজ্যওয়াড়ি গোষ্ঠীকোন্দলের ছবিই আজ প্রকট ভাবে ধরা পড়ল। হরিয়ানা হোক বা পঞ্জাব কিংবা দিল্লি— রাহুলের প্রত্যাবর্তনের সভার পাশাপাশি রাজ্যে রাজ্যে সেই কোন্দলের চিত্র আজ কিছুটা হলেও কংগ্রেসকে যে অস্বস্তিতে ফেলেছে, সন্দেহ নেই।

রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের সভায় রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ। ছবি: পিটিআই।

রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের সভায় রাহুল গাঁধী, সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

দলকে আন্দোলনমুখী করে তোলার মধ্যে দিয়ে যখন তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় হচ্ছেন রাহুল গাঁধী, তখন রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের রাজ্যওয়াড়ি গোষ্ঠীকোন্দলের ছবিই আজ প্রকট ভাবে ধরা পড়ল। হরিয়ানা হোক বা পঞ্জাব কিংবা দিল্লি— রাহুলের প্রত্যাবর্তনের সভার পাশাপাশি রাজ্যে রাজ্যে সেই কোন্দলের চিত্র আজ কিছুটা হলেও কংগ্রেসকে যে অস্বস্তিতে ফেলেছে, সন্দেহ নেই।

হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক তাওয়ার আজ মঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠতেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার অনুগামীরা হই হই করে আপত্তি জানান। বাধ্য হয়ে কোনও রকমে বক্তৃতা শেষ করে নেমে যেতে হয় অশোককে। আবার পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রতাপ সিংহ বাজওয়া পরোক্ষে নিশানা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহকে। মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, রাজনীতিতে বিক্ষুব্ধদের কোনও স্থান নেই। বিক্ষুব্ধদের উচিত হবে দলের স্বার্থে ঐক্যের বাতাবরণ বজায় রাখা।

লোকসভা নির্বাচনের আগেই হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পরিবর্তন করে তরুণ দলিত নেতা অশোক তাওয়ারকে সেই পদে বসান রাহুল। রাজ্যে তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। তাঁর সঙ্গে অশোক তাওয়ারের বরাবরই আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। হুডার হাতে রাজ্যের একচ্ছত্র সাংগঠনিক ক্ষমতা যাতে না থাকে, তার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন রাহুল। সম্প্রতি হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে গদি হারিয়েছেন হুডা। তার পর এখন রাজ্যে সংগঠনের ব্যাপারে হুডা আরও বেশি করে নাক গলাতে শুরু করেছেন। তাওয়ারের সঙ্গে বিরোধ সেখানেই। তার প্রতিফলনও আজ দেখা যায় রামলীলা ময়দানের সভায়। তাঁর শক্তি প্রদর্শনের জন্য হুডা আজ নিজের অনুগামী কৃষকদের গোলাপি পাগড়ি পরে সভায় আসার নির্দেশ দেন। কার্যত রামলীলার প্রায় সওয়া ভাগ দখল করেছিল সমর্থকরা। অশোক তাওয়ার মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠতেই বাধা তৈরি করেন তাঁরা। দলীয় সূত্রে খবর, অজয় মাকেনকে দিল্লির প্রদেশ সভাপতি করায় আজ রামলীলায় ভিড় জড়ো করতে অসহযোগিতা করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও তাঁর অনুগমীরাও।

রামলীলায় কংগ্রেসের কৃষকদরদি সভার আয়োজনের মূল দায়িত্ব ছিল দলের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহের ওপর। সভায় এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হল কেন? প্রকাশ্যে এর জবাব এড়িয়ে গেলেও ঘরোয়া আলোচনায় দিগ্বিজয় বলেন, কংগ্রেসে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি নতুন নয়। বরং এ-ও বলা যেতে পারে রাজ্যস্তরে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে রামলীলায় যে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি আজ দেখা গেল তার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতাও রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্তরে অনিশ্চয়তা ও দোলাচল দেখেই হুডা-বাজওয়া-শীলারা এ ভাবে সক্রিয়। রাহুল দলে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সফল হলে বা পায়ের তলার জমি শক্ত হলে তবেই কঠোর হাতে রাজ্যস্তরের এই বিক্ষুব্ধ রাজনীতি দমন করতে পারবেন। নইলে রাজ্যস্তরে কোন্দল আরও বাড়বে। দল ভাঙার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE