হলুদ নয়, বেছে বেছে গেরুয়া রঙের গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হচ্ছে গোরক্ষনাথের শ্বেতপাথরের মন্দির। রবিবারের সন্ধ্যারতিতে ভিড় উপচে পড়েছে ভক্তদের। হোলির এক সপ্তাহ পরে ফের মঠ জুড়ে আবির খেলা, লাড্ডু বিলি হচ্ছে। শহর জুড়ে মিষ্টি বিলি করছে হিন্দু যুবা বাহিনী। হবে না-ই বা কেন! গোরক্ষপুরের এই মন্দিরেরই পীঠাধীশ্বর ও মহন্ত যোগী আদিত্যনাথ আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সংসারত্যাগী গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীর হাতেই রাজ্যের যাবতীয় ক্ষমতা। তবে থাকছেন মন্দিরের মহন্ত তথা অধ্যক্ষ পদেও। কারণ পদটি অলাভজনক। সন্ন্যাসীরা ভক্তদের গর্ব করে দেখাচ্ছেন, ওই ছাদে পায়রাদের দানা খাওয়ান মহন্ত। এই গোশালার গরুদের খাওয়ান নিজে হাতে।
এই মন্দির থেকেই রাজনৈতিক যাত্রা শুরু আদিত্যনাথের। গুরু অবৈদ্যনাথ ১৯৯৮-এ নিজের লোকসভা আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন শিষ্যকে। তখন থেকে টানা ৫ বার গোরক্ষপুর থেকে জিতে সংসদে। প্রতি বার বেড়েছে তাঁর ভোটের পরিমাণ। বিজেপি নেতারা বলছেন, গোরক্ষপুর ছাড়িয়ে রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে তাঁর প্রভাব ছড়িয়েছে। গুজরাতে নিজের জনপ্রিয়তার জোরেই নরেন্দ্র মোদী আরএসএস-কে বাধ্য করেছিলেন তাঁর হাত ধরতে। উত্তরপ্রদেশে সেই একই কাজ করলেন আদিত্যনাথ।
আরও পড়ুন: গোরক্ষপুরের মন্দিরের পীঠাধীশ্বর আদিত্যনাথ আজ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী
এর পিছনেও মন্দিরের কর্মকাণ্ড— স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, সংস্কৃত বিদ্যাপীঠ, নার্সিং কলেজ, যোগাসন কেন্দ্র। সঙ্গে রয়েছে আদিত্যনাথের নিজস্ব হিন্দু যুবা বাহিনী। তারাই মহিলাদের সুরক্ষার কাজ করছে। ধর্মান্তরণ রুখছে। নিন্দুকেরা বলেন, ওই বাহিনী আসলে নিজেরাই ধর্মান্তর করায়। গোরক্ষার নামে সংঘর্ষ বাধায়। সংখ্যালঘু সম্পত্তি দখল করে। সত্যি-মিথ্যে যা-ই হোক, বাস্তব হল, এই বাহিনীকে হাতিয়ার করেই আড়াই দশকে গোরক্ষপুরের অলিখিত সম্রাট হয়ে উঠেছেন আদিত্যনাথ। মকর সংক্রান্তিতে খিচুড়ি মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে তাঁর। বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা ইরফান আহমেদ বলছেন, ‘‘উনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আর কিছু চাই না। উনি আমাদের সমস্যার কথা জানেন। সমাধান করবেন। আমরাও আজ গেরুয়া রঙে গোলি খেলছি।’’
গোরক্ষনাথ মন্দিরের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯২১-এ মহন্ত দিগ্বিজয়নাথ কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯২২-এ চৌরিচৌরায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গুলি করার প্রতিবাদে থানা পোড়ানো ও ২২ ব্রিটিশ পুলিশকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হন তিনি। পরে যোগ দেন হিন্দু মহাসভায়। গাঁধীজির হত্যার ঠিক আগে তাঁকে খুন করা ডাক দিয়ে ফের গ্রেফতার হন দিগ্বিজয়নাথ। ১৯৪৯-এ শুরু করেন রাম জন্মভূমি আন্দোলন। সেই সূত্রেই অযোধ্যায় রামসীতার মূর্তি প্রতিষ্ঠা। দিগ্বিজয়নাথ ও তাঁর উত্তরসূরি যোগী অবৈদ্যনাথ, দু’জনেই ছিলেন গোরক্ষপুরের সাংসদ। তাঁর উত্তরসূরির হাতে রাজ্যের ভার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy