পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদমন অভিযানের গতি আরও বাড়িয়েছে সেনা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দু’টি অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা। মঙ্গলবার শোপিয়ানে ‘অপারেশন কেলার’এবং বৃহস্পতিবার পুলওয়ামার ত্রালে ‘অপারেশন নাদের’-এ মোট ছয় জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে এই অভিযান, কী ভাবে জঙ্গিদের কোণঠাসা করা হয়েছিল, শুক্রবার তার ব্যাখ্যা এবং বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেনার তরফে। তাদের দাবি, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এই দুই অভিযান চালানো হয়েছিল এবং তা সফলও হয়েছে।
শুক্রবার কাশ্মীর জ়োনের পুলিশকর্তা ভিকে বিরদি জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছয় জঙ্গিকে ‘এনকাউন্টার’ করা হয়েছে। কেলারের উঁচু এলাকায় এবং ত্রালের সীমান্তবর্তী গ্রামে জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, সেনা এবং সিআরপিএফ ওই দুই এলাকায় অভিযানে যায়। গোয়েন্দা সূত্রে জঙ্গিদের গতিবিধি, কার্যকলাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর তবেই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশকর্তার দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘সেনা, সিআরপিএফ এবং পুলিশের পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতেই ৪৮ ঘণ্টায় দু’টি অভিযান সফল হয়েছে। মোট ছয় জঙ্গিকে নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ভাঙতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
অবন্তীপোরায় যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ভিক্টর ফোর্সের মেজর জেনারেল ধনঞ্জয় জোশী অভিযানের বিস্তারিত তথ্য দেন। তিনি জানান, প্রথম সংঘর্ষটি হয় শোপিয়ানের কেলারে। গত ১২ মে গোয়েন্দাদের থেকে ওই এলাকায় জঙ্গিদের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ মে জঙ্গিদের গতিবিধি চিহ্নিত করে শুরু হয় অভিযান।
দ্বিতীয় অভিযান হয় ত্রালে। খবর মেলে সেখানে একটি বাড়িতে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে। সেই খবর পাওয়ামাত্রই সীমান্তবর্তী ওই গ্রাম ঘিরে ফেলা হয় বলে জানান ভিক্টর ফোর্সের মেজর জেনারেল ধনঞ্জয়। তাঁর দাবি, পুলিশ এবং সেনার উপস্থিতি টের পেতেই জঙ্গিরা লুকিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় বাহিনীও। ধনঞ্জয়ের কথায়, ‘‘জঙ্গিরা যাতে গ্রামবাসীদের ঢাল বানাতে না পারে, সেটাই ছিল আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। খুব সন্তর্পণে এবং সুকৌশলে জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করে তার পরই অভিযান চালানো হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
‘অপারেশন কেলার’-এ শোপিয়ানে যে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তারা হল, শাহিদ কুট্টে, আদনান শফি দার, এহসান আহমেদ শেখ। আর বৃহস্পতিবার ত্রালে সেনার ‘অপারেশন নাদের’-এ যে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তারা হল, আসিফ আহমেদ শেখ (২৮), আমির নাজ়ির ওয়ানি (২০) এবং ইয়াওয়ার আহমেদ ভাট। তিন জনেই পুলওয়ামার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে আসিফ জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে অবন্তীপোরার জেলা কমান্ডার। ২০২২ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত আসিফ। আমির ২০২৪ সাল থেকে পুলওয়ামায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। ইয়াওয়ারও তা-ই। সে-ও গত বছর থেকেই পুলওয়ামায় সক্রিয় ছিল। আর শোপিয়ানে যে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তারা লশকর জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি পুলিশ সূত্রের।