রাশিয়ার খনিজ তেল কেনার ‘শাস্তি’। বুধবার থেকে ভারতীয় পণ্যে কার্যকর হয়ে গিয়েছে আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে কিন্তু কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে আমেরিকার আমদানিকারকেরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের বিকল্প হিসাবে ভারতের বাজারে ভরসা রেখেছিলেন তাঁরা। এই চড়া শুল্কের কারণে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বার ভারত বিকল্পের সন্ধান করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার বাণিজ্য মার খাবে।
ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে তিনি জানান, রাশিয়ার কাছ থেকে লাগাতার তেল কেনার কারণে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে। শাস্তি হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতের পণ্যের উপর। ফলে মোট রফতানি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। এই বিপুল শুল্কের কারণে বাণিজ্য ধাক্কা খাচ্ছে। বাতিল হয়ে যাচ্ছে বহু পণ্যের বরাত। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। নিউ ইয়র্ক টাইম্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্পর্কের যে অগ্রগতি হচ্ছিল, ট্রাম্পের পদক্ষেপে তা চুরমার হয়ে যাবে। তা ছাড়া, ভারতের শেয়ার বাজার বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। এখানে কয়েকশো কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক সেই বিনিয়োগের স্থিতিশীলতাকেও ধাক্কা দিল।
আরও পড়ুন:
চিনের সঙ্গে আপাতত শুল্ক-যুদ্ধে ‘সংঘর্ষবিরতি’ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চিন। কিন্তু তাদের উপর আমেরিকা কোনও বাড়তি শুল্ক আরোপ করেনি। কেন শুধু ভারতকেই ‘শাস্তি’র জন্য বেছে নেওয়া হল? প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের যুক্তি বেশ অদ্ভুত। মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো জানিয়েছেন, রাশিয়ার তেল পরিশোধন করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে চিন। তাই তাদের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হলে ইউরোপের বাজারে তার প্রভাব পড়বে। বেড়ে যাবে তেলের দাম। সেই কারণে চিনকে আপাতত শুল্ক তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। রাশিয়ায় গিয়ে এই যুক্তিকে ‘অদ্ভুত’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
আমেরিকান পণ্যে ভারতের চড়া শুল্ক নিয়ে অনেক দিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ ১০০ শতাংশেরও বেশি। এতে কিছু পণ্যের রফতানিতে আমেরিকার সমস্যা হচ্ছিল। ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ বলে উল্লেখও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু দু’দেশের ব্যবসায়ীদেরই বিশ্বাস ছিল, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির সমাধান হয়ে যাবে। যা হয়নি। এই মুহূর্তে আমেরিকার শুল্কের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দু’টি দেশের উপর— ভারত এবং ব্রাজ়িল।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, চড়া শুল্কের পর আমেরিকার বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে প্রধান বিকল্প হয়ে উঠতে পারে চিন। বেজিঙের তরফেও ভারতকে বাণিজ্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, নয়াদিল্লির কাছে রাশিয়া, জাপান এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ হয়ে উঠতে পারে বিকল্প। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ভারত থেকে আমেরিকায় রণ্য রফতানি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে এতে আদতে মার্কিন আমদানিকারকদের ক্ষতিই হবে। শুধু গত বছরেই সাড়ে ১৭ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে।
ভারতের কৃষিজাত পণ্যের বাজারে যে ছাড় দাবি করেছিলেন ট্রাম্প, তা দেওয়া হয়নি। ফলে শুরু থেকেই নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য-আলোচনার গতি ছিল ধীর। এর পরিবর্তে আমেরিকা থেকে জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। ২০২৫ সালের প্রথম ছ’মাসে আমেরিকা থেকে জ্বালানি পণ্যের আমদানির পরিমাণ ছিল ৬০০ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৭০ শতাংশ বেশি। মনে করা হয়েছিল, এতে ট্রাম্প খুশি হবেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।