Advertisement
E-Paper

কোথায় স্ত্রী, হন্যে হয়ে সাইকেলে ঘুরছেন স্বামী

সাইকেলে ঘুরেই চলেছেন বছর চল্লিশের লোকটি। ৬০-৬৫টি গ্রাম চষে ফেলেছেন মাসখানেকের মধ্যে। সঙ্গে স্ত্রীর একটি ছবি। জনে জনে দেখাচ্ছেন। যদি কেউ দেখে থাকেন, বলে দিতে পারেন তাঁর হদিস!    

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২০
খোঁজ: স্ত্রী অনিতার (ডান দিকে) এই ছবি নিয়েই সাইকেলে চষে বেড়াচ্ছেন সিংভূমের মনোহর নায়েক। —নিজস্ব চিত্র।

খোঁজ: স্ত্রী অনিতার (ডান দিকে) এই ছবি নিয়েই সাইকেলে চষে বেড়াচ্ছেন সিংভূমের মনোহর নায়েক। —নিজস্ব চিত্র।

সাইকেলে ঘুরেই চলেছেন বছর চল্লিশের লোকটি। ৬০-৬৫টি গ্রাম চষে ফেলেছেন মাসখানেকের মধ্যে। সঙ্গে স্ত্রীর একটি ছবি। জনে জনে দেখাচ্ছেন। যদি কেউ দেখে থাকেন, বলে দিতে পারেন তাঁর হদিস!

পূর্ব সিংভূমের বালিয়াগোড়া গ্রামের দিনমজুর মনোহর নায়েক। স্ত্রী বছর পঁয়ত্রিশের অনিতা মানসিক ভাবে পুরো সুস্থ নন। ডাক্তার বলেছিলেন, মনের অসুখেরও চিকিৎসা হয়। তবে খরচ অনেক। চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে মনোহর কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় ওডিশা গিয়েছিলেন ঠিকাদারের কাছে কাজ করতে। ক’দিন পরে খবর পান, খোঁজ মিলছে না অনিতার!

গ্রামে ফিরে জানতে পারেন, স্ত্রী তাঁর বাপের বাড়ি ডুমারিয়া থানার কুমড়াশোল থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন গত ১১ জানুয়ারি। সেই থেকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছেন বৌকে। বালিয়াগোড়া গ্রামের সব চেয়ে কাছের দুই থানা ডুমারিয়া ও মুসাবানিতে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু ডায়েরি করেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। বৌকে ফিরে পেতে কাজকর্ম শিকেয় তুলে বেরিয়ে পড়েছেন সাইকেল নিয়ে।

ঘুরতে ঘুরতে মনোহর চলতি সপ্তাহের গোড়ায় পৌঁছন মুসাবানি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ঘাটশিলার এক গ্রামে। সেখান থেকেই ফোনে বলেন, ‘‘ও-ই তো আমার সব। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেও ফল মেলেনি। আমি গরিব মানুষ। সাইকেলই সম্বল। তাই সাইকেল নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পড়েছি খুঁজতে। এখনও পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫টা গ্রাম ঘুরেছি। গ্রামের মানুষদের স্ত্রীর ছবি দেখাচ্ছি। আমার ফোন নম্বর দিতে দিতে এগোচ্ছি।’’

দিনমজুরিও তো বন্ধ। চলছে কী করে? প্রশ্ন করায় মনোহর বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর মানসিক অসুখ আছে। সেই অসুখের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। টাকার প্রয়োজনেই গ্রাম ছেড়ে ওডিশায় গিয়েছিলাম কাজের সন্ধানে। ওকে না ফিরে পেলে টাকার কী দরকার!’’

১৬ বছরের বিবাহিত জীবন মনোহরের। তাঁর ১৪ বছরের ছেলে কবীরদাস নায়েক। মনোহরের গ্রাম বালিয়াগোড়ার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মানসিক ভাবে অসুস্থ স্ত্রীকে সব সময় আগলে আগলে রাখতেন মনোহর। এত বছর হল বিয়ে হয়েছে কিন্তু এ রকম পত্নীপ্রেম সত্যিই বিরল। গত কয়েক সপ্তাহে মনোহর অন্তত কয়েকশো কিলোমিটার ঘুরেছেন সাইকেলে। গ্রামের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, মনোহরের স্মার্টফোন নেই। থাকলে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিখোঁজ স্ত্রীর ছবি দেওয়া যেত। তাই তাঁরাই মনোহরের স্ত্রীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার কথা ভাবছেন।

মনোরোগী স্ত্রীর প্রতি এমন ভালবাসা দেখে অবাক থানার অফিসারেরাও। মুসাবানি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলেন, ‘‘আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আশপাশের সব থানা হাসপাতালে অনিতাদেবীর ছবি দেওয়া হয়েছে।’’

রাত পোহাতেই মনোহর ফের পা রাখবেন প্যাডেলে। যাবেন নতুন কোনও গ্রামে। ফোনে কথার ফাঁকে গলা ভার হয় মনোহরের, ‘‘কোথায় আছে, কেমন আছে, কে জানে...’’

ভালবাসার এমন গাথা অনেক দিন শোনেনি পূর্ব সিংভূম।

Husband-Wife Missing Cycle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy