রাত তখন প্রায় ৯টা। আচমকাই ট্রেন ধরার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। তার পরই চিৎকার। মহিলা, শিশুর আর্তনাদে ভরে উঠল স্টেশন। ওভারব্রিজ দিয়ে নামার সময়েই একের পর এক শিশু, মহিলা, পুরুষ হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। আর জনতার বিপুল স্রোত সেই মানুষগুলির উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তখন সকলের একটাই লক্ষ্য, ট্রেন ধরতে হবে। কে পড়ল, কে মরল, কার হাত, কার পা ভাঙল, কে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছে, কোনও হুঁশ ছিল না ট্রেন ধরায় মত্ত যাত্রীদের।
শনিবার নয়াদিল্লি স্টেশনে রাতের দৃশ্যটা আচমকাই বদলে গিয়েছিল। পদপিষ্টের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মহিলা এবং শিশু-সহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও অনেক। ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ওভারব্রিজে যাত্রীদের ঠাসা ভিড় ছিল। সবাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আচমকাই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওভারব্রিজ দিয়ে নামতে শুরু করে যাত্রীদের ভিড়। ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। কেউ পারলেন, কেউ পারলেন না। কেউ পড়ে গিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন। কেউ পারলেন। কেউ পারলেন না। সেই ভিড়েই নিজের বোনকে হারাতে হয়েছে সঞ্জয়কে।
রাত ১০টা ১০ মিনিটে প্রয়াগরাজে যাওয়ার ট্রেন ছিল সঞ্জয়দের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, কন্যা, বৌদি, দাদা এবং বোন। তাঁরা এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য ওভারব্রিজে উঠছিলেন। সঞ্জয় জানান, ওভারব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। ওভারব্রিজে দাঁড়ানো যাত্রীরা আচমকাই হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিপুল সংখ্যক যাত্রী সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। আর সেই ধাক্কাতেই তাঁর কন্যা, স্ত্রী, বৌদি এবং বোন পড়ে যান।সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘দাদা আর আমি তিন জনকে কোনও রকমে উদ্ধার করতে পারলেও বোনের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। আধ ঘণ্টা ধরে খোঁজার পর দেখলাম সিঁড়িতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে ও।’’ সঞ্জয় জানিয়েছেন, ওকে এক ঘণ্টা ধরে সিপিআর দেওয়া হয়। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি বোনের। তাঁর অভিযোগ, কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়েও আসেননি। তার পরই বোনকে কাঁধে ফেলে রেললাইন ধরে হাসপাতালের উদ্দেশে ছুটতে শুরু করেন তিনি।