প্রতীকী ছবি।
চাকরি সর্বভারতীয়, নিয়ন্ত্রক প্রধানমন্ত্রীর আওতায় থাকা পার্সোনেল মন্ত্রক। যদিও কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন রাজ্য। তাই আমলাদের চাকরিতে কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানি চলতেই থাকে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজ্য আইএএস, আইপিএস’দের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে যেতে ছাড়পত্র দিচ্ছিল না। কেন্দ্রীয় পার্সোনেল ও ট্রেনিং মন্ত্রক গত বৃহস্পতিবার নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম-সচিব স্তরের অফিসারের তালিকাভুক্ত হতে হলে, উপসচিব বা অধিকর্তা স্তরে তাঁদের দু’বছরের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে কাজ করা বাধ্যতামূলক। তা না হলে কোনও আমলা সারা জীবন আর কেন্দ্রীয় সরকারের পদে যোগই দিতে পারবেন না।
২০০৭ ব্যাচের আইএএস অফিসারদের থেকে এই নীতি চালু হবে বলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে জানিয়েছে। বলা হয়েছে, আইএএস হিসাবে ১৬ বছর চাকরি হলেই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম-সচিব হিসাবে কাজ করতে পারবেন। তার আগে দু’বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেই হবে।
এই নির্দেশের ফলে রাজ্যগুলিকে মধ্যম স্তরের আমলাদের দু’বছরের জন্য দিল্লি পাঠাতেই হবে। কারণ, রাজ্য না ছাড়লে আমলাদের চাকরি জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা চলে যাবে। সেই কারণে আমলারাও দিল্লির ডেপুটেশনে যেতে মরিয়া হয়ে উঠবেন। আমলাদের একাংশের অভিযোগ, অফিসারের অভাব রয়েছে, এই যুক্তিতে নবান্ন আইএএসদের দিল্লিতে যেতে দিত না। এখন আর সেই যুক্তি বিশেষ টিকবে না। কারণ, নতুন নির্দেশিকায় কেন্দ্র রাজ্যের হাত থেকে ঘুরপথে আমলাদের দিল্লিতে ডেপুটেশনের ক্ষমতা নিয়েছে। রাজ্যগুলি এখন ছাড়পত্র না দিলেও আমলারা সরাসরি কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে চলে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার যুগ্ম-সচিব স্তর থেকেই রাজ্যের অফিসার নিতে চাইত। এ বার যে ভাবে উপ-সচিব স্তরেই বাধ্যতামূলক ডেপুটেশনের কথা বলা হয়েছে, তাতে জেলাশাসকের চাকরির পরেই আমলাদের সরাসরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নীতি প্রণয়নের কাজে লাগাতে চাইছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। নবান্নের এক শীর্ষ আমলার কথায়, ‘‘রাজ্যের দু’জন অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব কখনও কেন্দ্রীয় ডেপুটেশেন যাননি। তাঁদের কিন্তু কেন্দ্রীয় সচিব হিসাবে এমপ্যানেলমেন্ট হয়েছিল। ফলে নতুন নির্দেশিকায় কেন্দ্র এক প্রকার জোর করেই রাজ্যের অফিসারদের বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজ করিয়ে নেবে। এমন একটা সময়ে তাঁরা দিল্লিতে কাজ করবেন, যখন তৃণমূলস্তরের কাজ শেষ করে সবে সচিবালয়ে ঢুকছেন। নীতি প্রণয়নে মাঠে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা রাজ্য পেতে পারত, তা দিল্লি পাবে। তবে ব্যক্তিগত স্তরে আমলাদের কাছে এটা সোনার সুযোগ।’’
রাজ্যের আমলা মহল মনে করছে, নতুন নিয়মের মাধ্যমে একেবারে জুনিয়র নন, অথচ জেলাশাসক বা সম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসারদের ডেপুটি সেক্রেটারি হিসাবে পেতে চাইছে কেন্দ্র। এই স্তরের অফিসারেরাই সাধারণত বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচি রূপায়ণ করেন। আবার এক-একটি ব্যাচে অনেক আইএএস অফিসার থাকায় সবাই জেলাশাসকের পদ পান না। নিজ রাজ্যে কেউ জেলাশাসক হতে না পারলেও সর্বভারতীয় স্তরে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন। প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে জেলাশাসকের পদ পেতে সাত-আট বছর সময় লাগে অফিসারদের।
আমলা মহলের একাংশের মত, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিতে সম্মতি দেওয়ার হার বিরোধী রাজ্যগুলিতে তুলনায় কিছুটা কম। ফলে কেন্দ্রের শাসকদলের নিয়ন্ত্রণে যে রাজ্যগুলি আছে, সেখান থেকে বেশি করে অফিসার দিল্লির চাকরিতে যোগ দেবেন। ফলে নিজেদের মতো করে আমলাদের ‘নিয়ন্ত্রণের’ সুযোগও থাকবে কেন্দ্রের কাছে। আর রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এখন প্রশিক্ষণের পরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে প্রথমে দু’বছর এবং পরে তিন মাসের জন্য কাজ করতে হয় নতুন আইএএস অফিসারদের।
যদিও তাকে কার্যত ‘মগজ ধোলাই’ কর্মসূচি বলেই মনে করেন রাজ্যের অনেকে। সেই কারণে সম্ভবত অনেক সময়ে দেখা যায়, দিল্লি ফেরত নতুন অফিসারদের মহকুমাশাসক হিসেবে নিয়োগ পেতে কিছুটা সময় লাগে। এত দিন জুনিয়র অফিসারদের কাছে তা মাথাব্যথা ছিল। এ বার নতুন নির্দেশিকার পর পরিস্থিতি কী হয়, তা দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy