Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁস জেনেও পরীক্ষা কেন, উঠছে প্রশ্ন

দ্বাদশ শ্রেণির অর্থনীতি ও দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে খোদ সিবিএসই-র হাতেও চলে এসেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে জেনেও কেন পরীক্ষা নেওয়া হল, সিবিএসই চেয়ারম্যান অনিতা কারওয়ারকে আজ ডেকে তা জানতে চান মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা।

ক্ষোভের মুখ: সিবিএসই-র প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

ক্ষোভের মুখ: সিবিএসই-র প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০৪:৩১
Share: Save:

দ্বাদশ শ্রেণির অর্থনীতি ও দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে খোদ সিবিএসই-র হাতেও চলে এসেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে জেনেও কেন পরীক্ষা নেওয়া হল, সিবিএসই চেয়ারম্যান অনিতা কারওয়ারকে আজ ডেকে তা জানতে চান মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। অনিতা আজ বলেন, ‘‘বাচ্চাদের ভালর জন্যই আমরা কাজ করছি। ওদের কোনও চিন্তা নেই। ওদের পাশে আছি।’’

নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ, গুজরাতের আমলা অনিতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বাড়তি অস্বস্তিতে কেন্দ্র। কয়েক লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নষ্টের অভিযোগে আজ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এবং অনিতার ইস্তফা চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। দাবি উঠেছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের। প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘কত কিছু ফাঁস। তথ্য ফাঁস। আধার ফাঁস। নির্বাচনী তথ্য ফাঁস। এসএসসি প্রশ্ন ফাঁস। সিবিএসই প্রশ্ন ফাঁস। সব কিছু ফাঁস, কারণ চৌকিদার দুর্বল।’

গত কাল সিবিএসই জানায়, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় ওই দু’টি পরীক্ষা নতুন করে নেওয়া হবে। আজ জাভড়েকর বলেছেন, খুব দ্রত নতুন পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে। দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ইতিমধ্যেই ২৫ জন ছাত্র, বেশ কিছু অভিভাবক ও কোচিং সেন্টারের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ছাত্রদের মধ্যে ১৮ জন বিভিন্ন স্কুলের উঁচু শ্রেণিতে পড়ে। ৭ জন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আজ ১৫টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, কোথা থেকে প্রথম প্রশ্নটি ফাঁস হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিম দিল্লির রাজেন্দ্র নগর থেকে ভিকি নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। একটি কোচিং সেন্টার মালিক ভিকি প্রশ্ন ফাঁসের নেপথ্যে থাকতে পারেন বলে পুলিশের সন্দেহ।

গত সোমবার ছিল দ্বাদশের অর্থনীতির পরীক্ষা। তদন্তে জানা গিয়েছে, শুক্রবার থেকেই হাতে লেখা অর্থনীতির প্রশ্ন হোয়াট্‌সঅ্যাপে ঘুরতে থাকে। সিবিএসই কর্তৃপক্ষের ফ্যাক্সেও সেই প্রশ্নপত্র চলে আসে। যা শনিবার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গত বুধবার ছিল দশম শ্রেণির অঙ্ক পরীক্ষা। এ বারও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিবিএসই জানতে পারে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। হাতে লেখা এক কপি প্রশ্নপত্রও এ বারও পায় তারা।

কে ফ্যাক্স করেছিল সেই প্রশ্নপত্র? তা ছাড়া অনেকেই বলছেন, দু’বারই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে জেনে কেন সেই প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা নিল সিবিএসই? কেন বিকল্প প্রশ্নপত্র তৈরি ছিল না? জাভড়েকরদের মতে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বোঝা মাত্রই পরীক্ষা বাতিল করা উচিত ছিল। তা হলে এতটা অস্বস্তির মুখে পড়তে হত না সরকারকে।

আজ সিবিএসই দফতর, যন্তর মন্তর-সহ দিল্লির একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখান ছাত্র-ছাত্রীরা, অভিভাবকেরা ও একাধিক ছাত্র সংগঠন। একাধিক বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দশম ও দ্বাদশে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা। জাভড়েকর নিজেই বলেন, ‘‘২-৩টি বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আধ ঘণ্টা আগে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।’’ দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কোনও টাকার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করা হয়। তবে আজ যন্তর-মন্তরে উপস্থিত বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী দাবি করে, পরীক্ষার এক দিন আগে তারা ও তাদের বেশ কিছু বন্ধু জীববিদ্যা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রশ্ন বিক্রি আছে বলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন পায়। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলে হোয়াট্সঅ্যাপে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সেই ফোনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE