Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কোয়ালা চাই! বিজ্ঞাপন কেনাবেচার সাইটে

অনলাইন কেনাবেচার একটি সাইটে এ হেন বিজ্ঞাপন দেখে চোখ কপালে উঠেছিল বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর কর্তাদের। শুধু ওই বিজ্ঞাপনটিই নয়, সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছিল আরও একটি বি়জ্ঞাপন। এক জোড়া ঘুঘু— দাম ৮০ হাজার টাকা।

অস্ট্রেলিয়ান টেডিবিয়ার। মূল্য ২ লক্ষ টাকা। সঙ্গে দেওয়া রয়েছে একটি কোয়ালার ছবি!

অস্ট্রেলিয়ান টেডিবিয়ার। মূল্য ২ লক্ষ টাকা। সঙ্গে দেওয়া রয়েছে একটি কোয়ালার ছবি!

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

অনলাইন কেনাবেচার একটি সাইটে এ হেন বিজ্ঞাপন দেখে চোখ কপালে উঠেছিল বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর কর্তাদের। শুধু ওই বিজ্ঞাপনটিই নয়, সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছিল আরও একটি বি়জ্ঞাপন। এক জোড়া ঘুঘু— দাম ৮০ হাজার টাকা।

পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচার এই সাইটে আলাদা একটি বিভাগে কুকুর, গরু, ছাগল, খরগোশ, মুরগি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় নিয়মিত। সঙ্গে থাকে বিক্রেতাদের মোবাইল নম্বর। আগ্রহী ক্রেতারা ফোনে সরাসরি যোগাযোগ করে নেন বিক্রেতাদের সঙ্গে। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই সাইটে নজরদারি চালায় বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো। তাদের এক কর্তা জানালেন, এই সাইটগুলি ঘেঁটে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, সাধারণ কেনাবেচার ফাঁকেই চলছে চোরাকারবার। কিন্তু কী ভাবে?

ব্যুরো সূত্রের খবর, এই ধরনের অনলাইন সাইটে পোষ্য কেনাবেচার বিজ্ঞাপনের আড়ালে কখনও শুধুমাত্র ছবি, কখনও আবার ‘কি-ওয়ার্ড’ ব্যবহার করে বন্যপ্রাণী বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, মাস খানেক আগে একটি অনলাইন সাইটে পোষ্য কেনাবেচার আড়ালে কিছু বন্যপ্রাণী কেনাবেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ পায় তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সাইটের পোষ্য বিভাগটি ঘেঁটে তাঁরা দেখতে পান, ঘুঘু-টিয়া জাতীয় ভারতীয় পাখি বিক্রি করতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া রয়েছে। ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইনে এই ধরনের পাখি কেনাবেচা নিষিদ্ধ। ওই সাইটেই রয়েছে কোয়ালার ছবি দিয়ে ‘অস্ট্রেলিয়ান টেডিবিয়ার’ বিক্রির বিজ্ঞাপনটিও। কোয়ালা ভারতের প্রাণী না হলেও আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে এটির বেচাকেনা নিষিদ্ধ। প্রাণীটি পোষাও নিয়মবিরুদ্ধ। মূলত এই বিজ্ঞাপনটি নিয়েই শুরু হয় তদন্ত। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয় বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে। প্রথমে তিনি জানান, প্রাণীটি কিনতে হলে বারাণসী আসতে হবে। পরে জানান, তাঁর কাছে এমন কোনও প্রাণী নেই। নিছক মজা করতে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। যদিও সে ‘দাবি’র সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বন্যপ্রাণ অপরাধ ব্যুরোর কর্তারাই।

কিন্তু বিজ্ঞাপনে কোয়ালা-বিক্রেতার ফোন নম্বর থাকা সত্ত্বেও বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

ব্যুরোর দাবি, ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে নথিভুক্ত বন্যপ্রাণী বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া গেলেও কোয়ালার বিক্রিতে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কারণ গোটা বিশ্বে কোয়ালা কেনাবেচা এবং পোষা নিষিদ্ধ হলেও ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে তা নথিভুক্ত নয়। ফলে শুল্ক দফতরের নজর এড়িয়ে চোরাকারবারিরা প্রাণীটিকে নিয়ে এক বার দেশের ভিতরে ঢুকে পড়তে পারলেই আর উপায় থাকে না।

অনলাইন কেনাবেচার সাইটে যে বেআইনি সামগ্রী বা নিষিদ্ধ প্রাণী বিক্রি হয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর পূর্বাঞ্চল শাখার ডেপুটি অধিকর্তা অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি জানান, ওই অনলাইন সাইটেই হাতির দাঁত বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ রাজ্য থেকেই সেই বিজ্ঞাপনদাতাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বিজ্ঞাপনটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু বন্যপ্রাণী বিক্রির বিজ্ঞাপন তাঁদের নজরে এসেছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতারা অন্য রাজ্যের হওয়ায় তাঁরা সেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেন। তবে তার পর থেকেই সাইবার বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ওই সংস্থার বিজ্ঞাপনগুলির উপরে নজর রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিজিৎবাবু।

এ বিষয়ে ওই অনলাইন সাইট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও বেআইনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দেন না। তা সত্ত্বেও এ রকম কোনও বিজ্ঞাপন বেরোলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তা সরিয়ে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

illegal advertisement koala bear online
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE