E-Paper

হামলার জেরে ভিন্‌ রাজ্যে মার খাচ্ছেন কাশ্মীরিরা

অভিযোগ উঠেছে, কাংড়ার আর্নী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কালই হস্টেলের দরজা ভেঙে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের নিগ্রহ করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৭

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শ্রীনগর, ২৪ এপ্রিল: সমাজমাধ্যমে গত কাল রাত থেকেই ভেসে উঠছিল একের পর এক পোস্ট। হিমাচল প্রদেশের আর্নী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশ্মীরি পড়ুয়ারা আক্রান্ত। ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়েছে তাঁদের। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে বাড়ি ভাড়া করে থাকা কাশ্মীরি পড়ুয়া ও চাকরিজীবীদের অবিলম্বে ঘর খালি করে দিতে বলছেন বাড়িওয়ালারা। বলছেন, পরিস্থিতি নাকি নিরাপদ নয়। আর এ সবই ঘটছে পহেলগামের অদূরে বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিরা ধর্মের নামে পর্যটকদের খুন করার পরে। কিন্তু জঙ্গিপনার যে কোনও ধর্ম নেই, এই সহজ সত্যিটা ভুলে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রোশ নেমে আসছে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের উপরে।

জম্মু-কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েহামির অভিযোগ, পহেলগামের ঘটনার পরে সারা দেশে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের উপরে হামলা-হুমকির অন্তত আটটি ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে। নানা রাজ্য থেকে ফোন আসছে বিপন্ন পড়ুয়াদের। নাসির বলেন, ‘‘একটা ভিডিয়োয় ‘হিন্দু রক্ষা দল’ বলেছে, কাশ্মীরি পড়ুয়াদের আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার মধ্যে দেহরাদূন ছেড়ে চলে যেতে হবে। তার পর থেকে দেহরাদূনের কাশ্মীরি পড়ুয়াদের একাধিক ফোন পেয়েছি আমরা। আতঙ্কিত হয়ে দেহরাদূনের বিএফআইটি কলেজের বহু কাশ্মীরি পড়ুয়া ওই শহরের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে গিয়ে বসে রয়েছেন।’’ একটি ভিডিয়ো এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন নাসির। তাতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে এক গেরুয়াধারীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কাল আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে চাইব, কত জন কাশ্মীরি পড়ুয়া সেখানে আছে? তাদের মেরে তাড়ানো উচিত।’’ নাসিরের দাবি, এঁরা উত্তরাখণ্ডের ‘হিন্দু রক্ষা দল’-এর সদস্য। ওই ভিডিয়োর অন্য অংশে ‘কাশ্মীরিরা ফিরে যাও’ বলে স্লোগান দিয়ে গেরুয়া ঝান্ডাধারীদের মিছিল করতে
দেখা যাচ্ছে।

হিমাচল আর পঞ্জাবে অবশ্য ব্যাপারটা আর হুমকিতে আটকে নেই। অভিযোগ উঠেছে, কাংড়ার আর্নী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কালই হস্টেলের দরজা ভেঙে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের নিগ্রহ করা হয়েছে। চণ্ডীগড়ের ডেরা বস্‌সী-তে ইউনিভার্সাল গ্রুপ অব ইনস্টিটিউশনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল চত্বরেও আক্রান্ত হয়েছেন কাশ্মীরি ছাত্রেরা। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা এবং অন্য কয়েক জন ছাত্র মাঝরাতে জোর করে হস্টেলে ঢুকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপরে চড়াও হয় বলে কাশ্মীরি ছাত্রেরা অভিযোগ তুলেছেন। নাসির বলেন, ‘‘মারধরে ছাত্রদের জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। অন্তত এক জনের গুরুতর আঘাত লেগেছে। ডেরা বস্‌সী থেকে থেকে সাহায্য চেয়ে ওঁরাও যোগাযোগ করেছেন আমাদের সঙ্গে।’’

নাসির আরও জানান, প্রয়াগরাজে বাড়িওয়ালাদের চাপে কাশ্মীরিরা কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ভাড়াবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের কাছে পরিস্থিতি ক্রমশ সমস্যাসঙ্কুল হয়ে উঠছে। অভিভাবকেরা ঘোর চিন্তায়। বিপন্ন কাশ্মীরি পড়ুয়াদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করেছে কাশ্মীরি ছাত্র সংগঠনটি। তাদের জাতীয় সভাপতি উমর জামাল বলেছেন, পড়ুয়াদের সাহায্যার্থে তাঁদের এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে জম্মু-কাশ্মীরের রেসিডেন্ট কমিশনারও কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সেগুলি সর্বক্ষণ চালু থাকছে। উদ্বিগ্ন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। তিনি বলেছেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বলেছি, তাঁরা যেন (কাশ্মীরিদের দিকে) বাড়তি খেয়াল রাখেন।’’ সংবাদ সংস্থা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kashmir

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy