(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
রাজধানীর ভোট। বিন্তু তার জেরে ব্যস্ততা বঙ্গ বিজেপিতে। দিল্লির অলিগলিতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটপ্রচারে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের। বিহার, ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেতাদেরও ডাক পড়েছিল বিজেপির ‘মিশন দিল্লি’ সফল করার লক্ষ্যে। তাতে লাভ কতটা হল, ৮ ফেব্রুয়ারির আগে তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু দিল্লির ভোটে বঙ্গের নেতাদের এতটা গুরুত্ব স্মরণাতীত কালে বেনজির।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো বটেই, জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো, আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালদেরও দেখা গিয়েছে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে শামিল হতে। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই এ বার দিল্লিতে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল ‘পূর্বাঞ্চলীয় ভোটার’দের প্রভাব নিয়ে। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়েছেন এমন ভোটারদের উপস্থিতি এখন কোনও কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। তাই দিল্লিতে এ বার সব দল চেষ্টা করেছে ‘পূর্বাঞ্চলীয়’দের মন জয় করার। তবে বাঙালি নেতাদের নিয়ে গিয়ে বাঙালি মহল্লা চষে ফেলার লড়াইয়ে বিজেপি দৃশ্যতই আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। প্রচারে সেই দাপট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহালও রাখল বিজেপি। তাই সোমবার বিকেলে যখন প্রচার শেষ হচ্ছে রাজধানীর রণক্ষেত্রে, তখনও কালকাজি বিধানসভা এলাকার অলিগলিতে ঘুরতে দেখা গেল বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্তকে।
এ ভাবেই সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী চষে বেড়িয়েছেন দিল্লির একের পর এক বাঙালি মহল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
মোট পাঁচ দিন দিল্লিতে প্রচার করলেন সুকান্ত। তিনটি বিধানসভায় প্রচার করলেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে করোল বাগ এবং ত্রিলোকপুরী, যেখানে বাঙালি ভোটাররা নির্ণায়ক শক্তি। শেষ দিন পড়ে রইলেন কালকাজি বিধানসভা কেন্দ্রে। যেখানে দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ রমেশ বিধুড়ী। কংগ্রেসের হয়েও ময়দানে এক ‘হেভিওয়েট’— মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা চাঁদনি চকের প্রাক্তন বিধায়ক অলকা লাম্বা। কালকাজি এলাকায় বিজেপির একটি সাংগঠনিক মণ্ডল সামলানোর দায়িত্ব ছিল বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্রে মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে কী বললেন সুকান্ত? বললেন, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখুন! পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির কী হাল হচ্ছে দেখুন! আপনারা যদি এখনই সতর্ক না হন, তা হলে আপনাদের জন্যও বিপদ অপেক্ষায়।’’
শুভেন্দু দিল্লিতে প্রচারে গিয়েছিলেন দু’দিনের জন্য। কিন্তু সেই দু’দিনেই পাঁচটি বিধানসভা ছুঁয়ে এসেছেন। তার মধ্যে রয়েছে, গ্রেটার কৈলাস (চিত্তরঞ্জন পার্কের মতো অভিজাত বাঙালি এলাকা যার অন্তর্গত), নজফগড়, ঘোন্ডা, করোল বাগ। দিল্লি বিজেপির ‘বাঙালি প্রকোষ্ঠ’ আয়োজিত একের পর এক সভায় গিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘পহলে ভোটদান, উসকে বাদ জলপান। সকালে আগে ভোট দেবেন, তার পরে জলখাবার খাবেন।’’ যে সব কেন্দ্রে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি, সেখানে গিয়ে মা দুর্গার নামে বাঙালিদের ভোট চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বলেছেন, ‘‘বাঙালিরা মা দুর্গার পূজা করেন। মা দুর্গারই প্রতিভূ হচ্ছেন আমাদের দিদিরা-বোনেরা। তাই আপনারা প্রত্যেকে আমাদের মাকে, বোনকে, দিদিকে ভোট দিয়ে মোদীজির হাত শক্তিশালী করবেন।’’
দিল্লির বাঙালি ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরতে বিজেপির এতটা তৎপরতা আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি না, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করতে পারছেন না। তবে বাংলা-বিহার-ঝাড়খণ্ডের মন জয় করা যে এখন রাজধানীর সরকার দখলের অন্যতম ‘চাবিকাঠি’ হয়ে উঠেছে, দিল্লিতে বিজেপির প্রচার-কৌশল তা অনেকটাই স্পষ্ট করে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy