কথাটা শুনে যেন স্মৃতির অতলে ডুব দিলেন দশরথ মাহাতো। তামার খনির প্রাক্তন শ্রমিক দশরথ এখন ধোবনি পাহাড়ের নীচে চাষবাস করে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়ি ঘাটশিলার মুসাবনিতে। ষাটোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধ বললেন, “আপনি সু’দিনের কথা বলছেন? বছরের পর বছর ওই দিনের অপেক্ষা করছি। তামার খনি বন্ধ হয়ে গেল। কত জন বেকার হলাম। অনেকে মরেই গেল। আচ্ছে দিন তো আর ফিরল না।”
২৫ বছর আগে কোলহান অঞ্চলে রমরমিয়ে কাজ চলত বানালোপা, পথেরবেড়িয়া, কেন্দারি বা ভেদিয়ার মতো তামার খনিগুলিতে। কয়েক হাজার মানুষ কাজ করতেন। তামা তো ছিলই, ছিল সোনা-সহ আরও ধাতু। খনি শ্রমিকদের সংসারে তখন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা। বৃদ্ধ ধোবনি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলে চললেন, “খবর রটল ধোবনির সোনার খনির জল বের করার কাজ শুরু হবে। সোনার খনিও চালু হবে। কিন্তু হল না কিছুই। তামার খনিগুলোও বন্ধ হয়ে গেল। তার পর থেকে অভাব অনটন সঙ্গে নিয়েই বেঁচে আছি।”
নেতাদের কাছে শুধু মিলেছে ভাল দিন ফেরার প্রতিশ্রুতি। ইংরেজ আমলে খোঁজ মেলে ধোবনী পাহাড়ের সোনার খনির। ইংরেজরা সোনা নিয়ে যাওয়ার পরে খনির মুখ বন্ধ করে দেয়। নব্বই-এর দশকে ভারত সরকার খনিটি অধিগ্রহণ করে। ১৯৯৩ সালে জল বের করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু চার বছর পরই তা বন্ধ হয়।
২ ডিসেম্বর কোলহানের কুড়িটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট। যার মধ্যে রয়েছে ইস্পাতনগরী জামশেদপুর। যে শহরে জীবিকা রয়েছে, রয়েছে বিদ্যুৎ-শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও। উন্নয়নের সাজে ঝলমল করে টাটানগর। তার কাছে মুসাবনি, ধোবনি, ঘাটশিলা, সদুগোড়া, গুড়াবান্ধা, ডুমুরিয়া ডুবে থাকে অনুন্নয়নের অন্ধকারে। শিল্পাঞ্চলের মতোই ঝকঝকে জায়গা ছিল মুসাবনি। আজ কিছুই নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুড়াবান্ধা বা ডুমুরিয়ার মতো জায়গায় পান্না, গোমেদ, ক্যাটস আই-এর খনি বেওয়ারিশ পড়ে রয়েছে। কখনও গ্রামের মানুষ, কখনও দুষ্কৃতীরা সেই সব বহুমূল্য পাথর অবৈধ ভাবে খনন করে চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে। জীবিকার খোঁজে গরমের দিনে ৮-৯ ঘণ্টা সুবর্ণরেখায় গামছা ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন অনেকে। যদি বালির সঙ্গে সোনা ভেসে আসে, সেই আশাতেই। সুরদা তামার খনি কোনও মতে চলছে। চাইবাসায় লৌহ আকরিকের কয়েকটি খনি চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে বন্ধ।
এমনই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এ বার ভোট হচ্ছে কোলহানে। বিজেপি নেতা অর্জুন মুন্ডার কথায়, “বিজেপি ক্ষমতা পেলে ওই সব বন্ধ খনি চালু করার জন্য নতুন নীতি তৈরি করবে।” ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, খনি এলাকায় কারখানা তৈরির কথা তারা নির্বাচনী ইস্তাহারেই ঘোষণা করেছেন।
দু’দল এ রাজ্যে বার বার ক্ষমতায় বসেছে। কোলহানে দু’দলেরই বিধায়ক রয়েছেন। দু’দলই এ বার স্থায়ী সরকার তৈরির ডাক দিয়েছে।
ভাল দিন ফিরে পেতে কোলহান কার পক্ষ নেয় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy