প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। এ মুহূর্তে আমাদের দেশে সবচেয়ে অসহায় শিশুরা। একদিকে যেমন শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে বাড়ছে শিশু-পাচার। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা দুনিয়ায় এই রোগ প্রবল।কী বলবেন?
আমাদের এটা গর্ব, আমাদের দেশ চালিত হয় আধ্যাত্মিক, নৈতিক মূল্যবোধের মাধ্যমে। এগুলি আমাদের রক্তে, আমাদের ডিএনএ-র ভেতর রয়েছে। আমাদের সংবিধান, আইন, সমাজ, ইতিহাসে মানবিক বোধের সম্মান অনেক। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুনিয়ার অন্যতম গণতন্ত্রের পিঠস্থান এ দেশে শিশুরা সুরক্ষিত নয়। আমাদের ঘরে, পাড়ায়, স্কুলে, বাসে-ট্রেনে আমাদের শিশুরা সুরক্ষিত নয়।গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে শিশুরা সুরক্ষিত নয়।কারণ, শিশুদের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব বা সম্মানের সম্পর্ক রাখি না।তাদের কাপড়, খাবার, ভাল পড়াশোনার সুযোগ করে দিই, কিন্তু তাদের বন্ধু হই না। বন্ধুত্বের সময় আমাদের নেই। তাদের কথা শোনা বা সেই কথা নিয়ে আলোচনা করার কোনও অভ্যাস আমাদের নেই। তাই শিশুরা মনের কথা মা-বাবার কাছেই বলতে পারে না। বিশেষ করে এই প্রবণতা বেশি মধ্যবর্তী পরিবারগুলোয়।
আজ কোটি কোটি শিশুর এই সমস্যা। তারা ফুটবল খেলতে ভালবাসে, কিন্তু ফুটবল খেলোয়াড় হতে পারে না। আমি এমন শিশুদের সঙ্গেও কাজ করেছি, যারা অন্যের জন্য খেলনা তৈরি করে, কিন্তু নিজেরা খেলনা খেলতে পারে না। আমাদের মেয়েরা জন্তুদের থেকেও কম দামে বিক্রি হয়ে যায়। আমি এমন শিশুদেরকেও মুক্তি দিয়েছি যারা বাংলা থেকে দিল্লিতে বিক্রি হয়ে পাচার হয়েছে। পরিচারিকার কাজ করে তারা। জানিয়েছে, তাদের গ্রামে দু’লক্ষ টাকায় গাভী বিক্রি হয়। কিন্তু তার দাম দশ হাজার। শিশুরা সুরক্ষিত নয়। প্রতি ঘণ্টায় আট জন শিশু চুরি হয়। তারা হাওয়ায় বা আকাশে হারাচ্ছে না।তাদের কেউ না কেউ চুরি করছে, বিক্রি করছে। সে বেশ্যাবৃত্তির জন্যই হোক বা মজুরির জন্য। তাদের শরীরের অঙ্গ দেহাংশ প্রতিস্থাপনেরকাজেও ব্যবহার হয়। প্রতি এক ঘণ্টায় চার জন শিশুর ধর্ষণ হয় এ দেশে।এ কেমন দেশ? যারা এগুলি করছে, তারা শিশুদের মামা-কাকা-দাদা, এমনকী বাবাও।পরিবারের যে ধাঁচা, যা দেশ গঠন করে তা তো ভাঙবেই। যখন বড়দের শিশুরা ভরসা করতে পারে না, তখন কীভাবে আমরা দেশের বুনিয়াদকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব? আমি অনেকবার দেখেছি, শিশুরা বাড়ি ফিরে অগ্রজদের ছোঁয় না। তাদের মনে হয়, সেটা ভাল না খারাপ ছোঁয়া হবে, তারা জানে না। এ সব বললেও বিপদ, না বললেও বিপদ। কত খারাপ আমাদের অবস্থা। তাই বলছি, শিশুদের সুরক্ষিত না করতে পারলে, তাদের দেশের সংস্কৃতি, সংবিধানের মর্যাদা ভেঙে পড়বে। তাই শিশুদের দেশের প্রয়োজনে সুরক্ষা দেওয়া আমাদের প্রাথমিক কাজ।
আরও পড়ুন, ‘একটার অন্তত মরা উচিত’, মুহূর্তে শোনা গেল গুলির শব্দ