E-Paper

জ্ঞানেশকে অপসারণের প্রস্তাব আনার ভাবনা বিরোধী শিবিরে

সোমবার সকালে সংসদ ভবনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতরে বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। বিরোধী শিবিরের সকলে এক সুরে বলেন, বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি জ্ঞানেশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ০৯:১৫
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। —ফাইল চিত্র।

আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ।

‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তোলার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করেছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিরোধী শিবির জ্ঞানেশ কুমারকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অপসারণ বা ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা শুরু করে দিল।

সোমবার সকালে সংসদ ভবনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতরে বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। বিরোধী শিবিরের সকলে এক সুরে বলেন, বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি জ্ঞানেশ। উল্টে ‘ভোট চুরি’র কথা বলায় বিরোধী শিবিরের বিরুদ্ধে সংবিধানকে অপমান করার অভিযোগ এনেছেন। ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে ‘হলফনামা দিতে হবে, না হলে ক্ষমা চাইতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি ‘বিজেপির মুখপাত্র’র মতো কথা বলেছেন।

বৈঠকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘জ্ঞানেশের বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’-এর প্রস্তাব আনা হোক।’’ কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘জ্ঞানেশ কুমারের শরীরের ভাষা নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের মতো ছিল।’’ বৈঠকের পরে খড়্গে রাজ্যসভায় অভিযোগ তোলেন, ‘‘সংবিধান ভোটের অধিকার দিয়েছে। কেউ এই অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে না। নির্বাচন কমিশন আমাদের ধমকাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে।’’ এর পরে আটটি প্রধান বিরোধী দলের সাংসদরা এককাট্টা হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তোলেন, জ্ঞানেশ কুমার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সাংবিধানিক পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। জ্ঞানেশ তাঁর ‘রাজনৈতিক প্রভুদের হাতের পুতুল’ হয়ে কাজ করছেন।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এখন বিহারে ভোটাধিকার যাত্রা করছেন তেজস্বী যাদবের সঙ্গে। সেখানে গয়া থেকে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘তিন নির্বাচন কমিশনারকে বলছি। আপনারা এখন মোদী সরকারের হয়ে কাজ করছেন, ঠিক আছে। ইন্ডিয়া শিবির ক্ষমতায় এলে কিন্তু আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’

সরকারি ভাবে জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব আনার ঘোষণা আজই না হলেও কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ জানিয়েছেন, যথাসময়ে যথোচিত পদক্ষেপ করা হবে। আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, সমস্ত সাংবিধানিক ও আইনি বিকল্প বিরোধীদের সামনে খোলা রয়েছে। সূত্রের খবর, নীতিগত ভাবে সব বিরোধী দলই জ্ঞানেশের বিরুদ্ধে অপসারণ প্রস্তাব আনতে রাজি। কী ভাবে তা আনা হবে, তা দ্রুত ঠিক করে ফেলা হবে। তবে সংসদের বাদল অধিবেশনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। ফলে এই অধিবেশনে প্রস্তাব আনা কঠিন।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পদ থেকে অপসারণের মতোই। সংসদের দুই কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থনে প্রস্তাব পাশকরাতে হবে। বিরোধীদের কাছে এই সংখ্যা না থাকলেও বিরোধী শিবিরের মত হল, এর ফলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়ে থাকবে। ঠিক যে উদ্দেশ্যে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অপসারণের প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছেন, বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষের মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত বলে নির্বাচন কমিশনের দাবি। তা হলে কি লোকসভা নির্বাচনের ভোটার তালিকা ভুলে ভরা ছিল? তা হলে বর্তমান ও প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারদের কাঠগড়ায় তোলা উচিত। লোকসভা ভেঙে দেওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন কেন বিরোধীদের থেকে হলফনামা চাওয়ার বদলে ভোটার তালিকায় গলদ নিয়ে নিজে থেকে তদন্ত করছে না? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আগে কেন নির্বাচন কমিশন প্রথমেই ৬৫ লক্ষের নামের তালিকা প্রকাশ করেনি? বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় কী ভাবে মৃতরা থেকে গেলেন? জীবিতরা কি বাদ পড়ে গেলেন?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gyanesh Kumar Election Commission of India INDIA Alliance

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy