জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করায় নয়াদিল্লিতে পাক হাইকমিশনে তাদের জাতীয় দিবসের উৎসব বয়কট করল ভারত। বিষয়টি নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা না রেখে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘আমাদের অবস্থান জানা সত্ত্বেও পাকিস্তান হুরিয়ত নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা এটাকে হালকা ভাবে নিচ্ছি না। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভারতের কোনও প্রতিনিধি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।’’
পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতও ইসলামাবাদের ওই অনুষ্ঠান বয়কট করেন। হুরিয়তের বেশির ভাগ নেতাই এখন বন্দি অথবা আত্মগোপন করে রয়েছেন। আজ তাদের পিছনের সারির কোনও নেতাকেও দেখা যায়নি অনুষ্ঠানে। মনে করা হচ্ছে, ধরপাকড়ের ভয়ে তাঁদের কেউ আসেননি। দিল্লিতে এ দিন মহম্মদ হাসান আন্টু নামে হুরিয়তের এক নেতাকে গ্রেফতার করে চাণক্যপুরী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ‘ভারত বয়কট করছে’— এই যুক্তি দেখিয়ে সাংবাদিকদেরও ওই অনুষ্ঠানে যেতে নিরুৎসাহ করার চেষ্টা চলে রাজধানীতে। তবে অনুষ্ঠান বয়কট করলেও পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে সে দেশের মানুষকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইট করে জানিয়েছেন সে কথা। তাতে দেখা যাচ্ছে শুভেচ্ছার পাশাপাশি মোদী লিখেছেন, সন্ত্রাস ও হিংসা থেকে মুক্ত হয়ে গোটা উপমহাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল অঞ্চল করে তোলার সময় এসেছে। অস্বস্তি এড়াতে ইমরান পরে ‘সন্ত্রাস ও হিংসার’ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে নতুন একটি টুইট করেন রাতে।
প্রশ্ন উঠছে, আগেও পাকিস্তান হুরিয়ত নেতাদের আমন্ত্রণ করেছে এই অনুষ্ঠানে। প্রথম সারির কোনও মন্ত্রী না গেলেও প্রতিমন্ত্রী বা বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান বিষয়ক আমলাকে অন্তত পাঠানো হয়েছে। এ বারে কেন বয়কট? কেনই বা মোদীর ওই বার্তা?
আরও পড়ুন: প্রথম দফার তালিকাতে অসন্তুষ্ট কর্মীরা, ক্ষোভের মুখে জেরবার রাজ্য বিজেপি
আরও পড়ুন: ইয়েড্ডির ডায়েরিতে উঠল ঝড়, অমিত বললেন জালিয়াতিতে নেমেছে কংগ্রেস
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শাসক শিবিরের লোকজন মনে করছেন, প্রতিবেশীর জাতীয় দিবসে শুভেচ্ছা জানানোটা কূটনৈতিক সৌজন্য। মোদী তা দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের প্রশ্নটিও জুড়ে দিয়েছেন বার্তায়। সামনেই ভোট। তার আগে পাকিস্তানের প্রতি বিন্দুমাত্র নরম হওয়ার বার্তা দিতে চাইছে না মোদী সরকার। বিরোধী শিবিরের লোকজনের বক্তব্য, কৃষি সঙ্কট, বেকারি বা রাফাল দুর্নীতির মতো সমস্ত বিষয় থেকে মুখ ঘুরিয়ে ভোটের আগে এই জাতীয়তাবাদের চিত্রনাট্যে ভরসা রাখছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই সাংবাদিক বৈঠক করে ‘বয়কট’-এর ঘোষণা করে ‘জাতীয়বাদের জিগিরকে’ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটল দিল্লি।
এই দ্বিপাক্ষিক টানাপড়েনের মধ্যে ২০০৭-এর সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ মামলায় চার ভারতীয় অভিযুক্তের ছাড় পাওয়া নিয়ে ভারতকে বিঁধেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মামুদ কুরেশি, ‘‘ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সিদ্ধান্ত সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান এই ঘটনার কড়া নিন্দা করছে এবং একটি প্রতিবাদপত্র দেওয়া হচ্ছে ভারতকে।’’ সদ্য বেজিং সফর সেরে আসা কুরেশি বলেছেন, মাসুদ আজহারকে নিয়ে চিনা নেতৃত্বে সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কথা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে, তা নিয়েও। এবং এই আলোচনা চলবে। কুরেশির বক্তব্যের সমালোচনা করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে বিশ্বের দেশগুলির। কিন্তু পাকিস্তানের এ ব্যাপারে কোনও ধারণাই নেই। পাকিস্তানের উচিত আগে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করা।’’
পাক হাইকমিশনার সোহেল মামুদ ভারত-পাক সম্পর্কে ‘দীর্ঘ শৈত্য কেটে বসন্তের আগমনের’ আশা প্রকাশ করছেন। তাঁর বক্তব্য, যোগাযোগের অভাবেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। এই সূত্রে তাঁর দাবি, ইমরান খানের সঠিক পদক্ষেপে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy