সাংবাদিক বৈঠক থেকে রবিবার নাম না-করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব কমিশনকে ‘পুতুল’ বলে পাল্টা তোপ দাগলেন। দিল্লিতে যখন কমিশনকে নিশানা করে সাংবাদিক বৈঠক করছেন কংগ্রেসের গৌরব গগৈ, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদবেরা, তার পিঠোপিঠি সময়েই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও হুঁশিয়ারি দিলেন কমিশনের উদ্দেশে। এর পাশাপাশি, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোন পথে যাবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে দিল্লিতে।
রাহুল যে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ করেছেন, তাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে কমিশন। জ্ঞানেশের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করে না। কমিশনের কাছে শাসক এবং বিরোধী উভয় শিবিরই সমান। কমিশনের দরজা সকলের জন্য সমান ভাবে খোলা। ‘ভোট চুরি’ বিতর্কে নাম না-করে রাহুলকে নিশানা করেন তিনি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “হয় হলফনামায় স্বাক্ষর করুন অথবা ক্ষমা চান। তৃতীয় কোনও বিকল্প নেই। যদি সাত দিনের মধ্যে হলফনামা জমা না-দেন, তা হলে বুঝে নিতে হবে তাঁর (রাহুলের) অভিযোগ ভুল।” মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে ভারতের ভোটারদের নিশানা করা হচ্ছে। রাজনীতি করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন:
তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা অভিষেক সোমবার কমিশনের ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘‘কমিশন হলফনামা দিয়ে বলুক এক জনও ভুয়ো ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না। এক জন যোগ্য ভোটারের নামও বাদ যাবে না। তা হলে বিরোধী দলগুলিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলফনামা দেবে।’’ কমিশনের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ নিয়ে বিজেপি কেন আগ বাড়িয়ে মুখ খুলছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। অন্য দিকে দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া বলেন, ‘‘কমিশনের কাজ মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করা। কিন্তু তার বদলে দেখা যাচ্ছে, কমিশনের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন উঠছে, তার সুনির্দিষ্ট জবাব না-দিয়ে তারা পাশ কাটাতে অন্য নানা কথা আনছে।’’ মহুয়া বলেন, ‘‘লজ্জাজনক ভাবে কমিশন পুতুলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কমিশনের কাজ বিরোধীদের আক্রমণ করা নয়। আমি অনুরোধ করব, মিস্টার নির্বাচন কমিশনার, আপনি আপনার রাজনৈতিক অভিসন্ধি পরিত্যাগ করুন।’’
অন্য দিকে ‘ইন্ডিয়া’র আর এক শরিক, তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকের প্রধান তথা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বিহারের এসআইআর নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘‘কেন ভোটের তিন মাস আগে এই প্রক্রিয়া করতে হল?’’ তাঁর অভিযোগ, কমিশনের কিছু কর্তা পক্ষপাতিত্ব করছেন। এবং এই কর্তারা ভোটার তালিকা নিয়ে কোনও ধরনের তদন্তেও রাজি নন বলে দাবি করেছেন স্ট্যালিন।
নির্বাচন কমিশন তথা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে কার্যত সংঘাতের পথে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিরোধীরা। কোন পথে তারা এগোবে, এ নিয়ে নানা জল্পনা ভাসছে রাজধানীর রাজনীতিতে। বিরোধীদের একটি অংশ চায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারিত করতে প্রস্তাব আনা হোক সংসদে। আবার কংগ্রেসের একটি অংশ চাইছে এফআইআর দায়ের করতে। কংগ্রেসের এই ভাবনার কথা তারা জানিয়েছে তৃণমূলকেও। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের এক সাংসদের কানে বিষয়টি আসতে তিনিও আইন বোঝা লোকজনের কাছে জানতে চান, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যায় কি না। তৃণমূলের এক সাংসদের বক্তব্য, ‘‘এ ভাবে কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যায় না।’’ পথ কী হবে তা নিয়ে ঐকমত্য না-হলেও উদ্দেশ্যের বিষয়ে বিরোধীদের ঐক্যের ছবিই দেখা যাচ্ছে রাজধানীতে। সোমবার সংসদের বাইরে এসআইআর নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী নেতারা। পরে সাংবাদিক বৈঠকও করে একসঙ্গে।