শোভা বর্তমান।—নিজস্ব চিত্র।
দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ। ইরাকের সুলেমানিয়ায় চোখের সামনে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে বহু মানুষকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে দেখেছেন। কিন্তু টলে যাননি। তার পরেও ইরানে গিয়ে তাঁর রোগীদের দ্রুত সেরে ওঠার জন্য প্রাণায়াম শিখিয়েছিলেন শোভা বর্তমান।
পাকিস্তানি সেনার হাতে বন্দি উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের বাবা ও ঠাকুর্দা, দু’জনেই বায়ুসেনার অফিসার ছিলেন। বায়ুসেনার অফিসারেরা বলছেন, অভিনন্দনের ডিএনএ-তে সাহস নামক বস্তুটির জন্য তাঁর মা শোভার অবদানও অনেক। পেশায় চিকিৎসক শোভা বিশ্বের প্রায় সমস্ত যুদ্ধ উপদ্রুত এলাকায় কাজ করেছেন। আত্মঘাতী বোমা বা একে-৪৭, কিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে।
সেই অদম্য সাহসই দেখা গিয়েছে অভিনন্দনের চরিত্রে। কাল পাক সেনার প্রচারিত ভিডিয়ো-য় দেখা গিয়েছিল, তাঁর দেখাশোনার জন্য ধন্যবাদ জানালেও পাক সেনা অফিসারদের জেরায় কোনও উত্তর দিতে অস্বীকার করছেন অভিনন্দন। বায়ুসেনায় অভিনন্দনের সহকর্মীরা বলছেন, এটাই ওঁর বৈশিষ্ট্য। ডাকাবুকো।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ফের সাফল্য সেনার, গুলির লড়াইয়ে খতম দুই জঙ্গি
২০১১-র একটি তথ্যচিত্রে ওঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সুখোই-৩০-র পাইলট হতে গেলে কী প্রয়োজন হয়? সে সময় ফ্লাইট লেফটেনান্ট পদে থাকা অভিনন্দন বলেছিলেন, ‘ব্যাড অ্যাটিটিউড’। বন্দি হয়েও ছেলের সেই ‘অ্যাটিটিউড’ দেখে অবসরপ্রাপ্ত এয়ারমার্শাল বাবা বলছেন, ‘‘দেখুন, ও কেমন সাহসের সঙ্গে কথা বলছে। একদম সাচ্চা সৈনিকের মতো।
আরও পড়ুন: মিগ থেকে সুখোই সব বিমান ওড়ানোতেই দক্ষ অভিনন্দন
আমরা ওঁর জন্য গর্বিত।’’ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ অভিনন্দনকে ভারতে ফেরত পাঠানোর কথা ঘোষণা করার পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওঁর সুস্থ শরীরে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের প্রার্থনা শুধু একটাই। ওর উপর যেন অত্যাচার না হয়। ও নিরাপদে সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে ফিরে আসুক।’’
আরও পড়ুন: কী ভাবে চলে জইশ নেটওয়ার্ক? কোথা থেকে আসে টাকা?
এই প্রসঙ্গেই বায়ুসেনার অফিসারেরা মনে করাচ্ছেন অভিনন্দনের মায়ের কথা। বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত পাইলট, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণ সিংহ আজ লিখেছেন, চিকিৎসক হিসেবে মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ) বা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠনের হয়ে লাইবেরিয়া, ইরাক, আইভরি কোস্ট, পাপুয়া নিউ গিনি, হাইতি, লাওস-সহ বহু যুদ্ধ উপদ্রুত এলাকায় কাজ করেছেন শোভা। মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশের পরে ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জেনস থেকে অ্যানাস্থেসিওলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন শোভা। আন্তর্জাতিক সংগঠনের হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় প্রসবকালীন জটিলতার চিকিৎসা করতেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাওয়ার গতি উল্টো থাকাতেই পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েন অভিনন্দন
যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শোভার কাজ শুরু আইভরি কোস্ট থেকে। শোভা নিজেই বলেছেন, সেখানে তখন একে-৪৭-এর শাসন। সে বছরই তাঁকে যেতে হয় লাইবেরিয়া। গৃহযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে, কিন্তু শান্তি ফেরেনি। তার পরে নাইজেরিয়া। সেখানে আদিবাসীদের সঙ্গে তেল কোম্পানির সংঘাতের মধ্যেই পোর্ট হারকোর্টের হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট চালু করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বাতিল হচ্ছে মিগ ২১, আকাশ যুদ্ধকে অন্য মাত্রা দিতে আসছে তেজস
বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার বাবা আর যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় কাজ করে যাওয়া সাহসী মা। ওঁদের ছেলে যে সুখোই-৩০ বা মিগ-২১ নিয়ে আকাশে উড়বে, তাতে আশ্চর্য কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy