ওয়াঘা সীমান্তে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছেন পাকিস্তান আধিকারিকরা। ছবি: পিটিআই
অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু তাঁর পিস্তল-সহ অনেক কিছুই ফেরত দেওয়া হয়নি। ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে যে ‘টেকিং ওভার সার্টিফিকেট’ বা হস্তান্তরপত্র ভারতকে দিয়েছে পাক সেনা, তাতেও সেগুলির কোনও উল্লেখ নেই। ফলে সেই পিস্তল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পাক সেনা রেখে দিয়েছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তবে তাঁর ঘড়ি, চশমা এবং আঙটি ফেরতের কথা স্পষ্ট বলা হয়েছে ওই হস্তান্তর পত্রে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশ সীমায় ঢুকে পড়ে। সেই সময় মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে তাদের তাড়া করেন অভিনন্দন এবং একটি পাক এফ-১৬ ধ্বংস করে দেন। কিন্তু নিজের মিগ-২১টিও ধ্বংস হয় এবং বিমান থেকে বেরিয়ে প্যারাসুটের সাহায্যে নীচে নামেন ভারতীয় বায়ু সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন। সেটা ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর। সেখানেই পাক সেনার হাতে আটক হন তিনি। তবে পরে পাকিস্তান অভিনন্দনকে ভারতে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতোই গত শুক্রবার রাতে ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে ভারতের হাতে অভিনন্দনকে তুলে দেয় পাকিস্তান। রাত ৯.২৫ মিনিটে দেশের মাটিতে পা রাখেন অভিনন্দন।
যখন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাক সেনা তাঁকে উদ্ধার করে তখন অভিনন্দনের কাছে কী কী ছিল? ওই সময়ের ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, তিনি সেনার পোশাকে ছিলেন। আবার পাক মিডিয়া, সেনা এবং ভারতীয় সেনার বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলেছে, ওই সময় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাঁচতে তাঁর কাছে থাকা পিস্তল থেকে শূন্যে গুলি চালিয়েছিলেন অভিনন্দন। আর তাঁর সঙ্গে থাকা গোপন নথিপত্র ছিল, যা তিনি নষ্ট করে দিয়েছিলেন এবং কিছু নথি খেয়ে ফেলেছিলেন বলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তাঁর সঙ্গে আত্মরক্ষার বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং জীবনদায়ী ওষুধপত্রও ছিল।
আরও পড়ুন: অভিনন্দনের শরীরে যন্ত্র ঢোকায়নি পাকিস্তান, মেরুদণ্ড-পাঁজরে চোট, জানালেন চিকিৎসকরা
কিন্তু হস্তান্তরের সময় দেখা গিয়েছে, পাক সেনা ও বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে অভিনন্দন ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে আসেন খালি হাতে। সাধারণ পোশাকে—ট্রাউজার, শার্ট ও ব্লেজার পরে। বায়ু সেনার পোশাকে নয়। সঙ্গে কোনও ব্যগপত্রও ছিল না। আর ওই সময় পাক সরকারের পক্ষ থেকে একটি নথি ভারতকে দেওয়া হয়। পাকিস্তান যে ভারতের হাতে অভিনন্দনকে তুলে দিয়েছে, তার প্রমাণ হিসেবেই ওই নথি। সেখানে অভিনন্দনের ব্যক্তিগত এবং বায়ু সেনার সার্ভিস নম্বর উল্লেখ করার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গের জিনিসপত্রের উল্লেখ রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে মাত্র তিনটি জিনিস— ক্যাসিও জি-শক হাতঘড়ি নীল রঙের (একটি), আঙটি (একটি) এবং সানগ্লাস (একটি)।
আরও পড়ুন: জইশ প্রধান, মোস্ট ওয়ান্টেড মাসুদ আজহার মৃত? জল্পনা তুঙ্গে
তাহলে অভিনন্দনের পিস্তল কোথায় গেল? কী হল তাঁর বায়ু সেনার পোশাক বা সঙ্গে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্রের? সীমান্তের ও পার থেকে এ প্রশ্নের কোনও উত্তর আসেনি। তবে কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ওই জিনিসপত্র ফেরত না দিয়ে নিজেদের হেফাজতেই রেখে দিয়েছে পাক সেনা।
ওই হস্তান্তর পত্রে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের তরফ থেকে অভিনন্দনকে কখনওই ‘প্রিজনার অব ওয়ার’ বা ‘যুদ্ধবন্দি’ বলা হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানের ওই হস্তান্তরপত্রে অভিনন্দনকে সেই তকমাই দিয়েছে। অথচ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জেনিভা কনভেনশনের উল্লেখ নেই।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy