Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাষ্ট্রপতি-জায়া শুভ্রাদেবীর অন্ত্যেষ্টি কাল, আসছেন হাসিনা

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কার্যত জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন গত ১২ দিন। আজ মারা গেলেন দেশের ‘ফার্স্ট লেডি’ তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। নয়াদিল্লির সেনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শুভ্রা দেবী। আজ সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ১১:৩৩
Share: Save:

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কার্যত জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন গত ১২ দিন। আজ মারা গেলেন দেশের ‘ফার্স্ট লেডি’ তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। নয়াদিল্লির সেনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শুভ্রা দেবী। আজ সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি।

খবর পাওয়া মাত্র সকালে সেনা হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। দুপুরে রাষ্ট্রপতি ভবনে মৃতদেহ নিয়ে আসার পর প্রণব-জায়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ প্রমুখ বিশিষ্ট রাজনীতিক। কাল নয়াদিল্লির লোধি রোড শশ্মানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে শুভ্রা দেবীর। তার আগে তাঁর মরদেহ আজ সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয় তালকাটোরা রোডে বড় ছেলে সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সরকারি বাসভবনে। অতীতে রাজ্যসভার সাংসদ ও পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে প্রায় দু’দশক ধরে এই বাড়িটি প্রণববাবুরও সরকারি বাসভবন ছিল। পদাধিকার বলে এর থেকেও বড় বাংলো পাওয়ার সুযোগ থাকলেও মূলত শুভ্রা দেবীর কারণে বাড়িটি কখনও ছাড়েননি প্রণববাবু। সন্ধ্যায় সেই বাড়ির বৈঠকখানায় শায়িত প্রণব-পত্নীকে আজ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কাল সকালে এখানে বা লোধি রোডের শশ্মানে গিয়ে শুভ্রা দেবীর অন্তিম সংস্কারে সামিল হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রণব মুখোপাধ্যায় হয়ে ওঠার পিছনে কারিগর ছিলেন শুভ্রাই
লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল। সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

শিক্ষিকা শুভ্রাদেবীর স্মরণে ছুটি স্কুলে
সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

ঘরের মেয়ে আর ফিরবে না, শোকের ছায়া নড়াইলে

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

১৯৪০ সালে বাংলাদেশের যশোহরে জন্ম শুভ্রাদেবীর। ছেলেবেলাতেই পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। প্রণববাবুর সঙ্গে যখন তাঁর প্রথম পরিচয় হয় তখনও নাবালিকা তিনি। বিয়ে হয় মাত্র ১৭ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তি ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তিতে পারদর্শী ছিলেন তিনি। বিয়ের পর ‘গীতাঞ্জলি’ নামে একটি ট্রুপ তৈরি করেছিলেন, সেই ট্রুপ নিয়ে তিনি দেশের মধ্যে এবং ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বহু জায়গায় গান ও নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছেন। আবার এক জন চিত্রশিল্পী ও লেখক হিসাবেও পরিচিতি ছিল তাঁর। দুটি বই লিখেছিলেন, ‘চোখের আলোয়’ এবং ‘চেনা অচেনায় চিন’। আর এ সবের বাইরে শুভ্রাদেবী কার্যত নিঃশব্দেই সমাজসেবাও করেছেন। বিশেষ করে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে মিলে অনাথ ও দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য এক সময় খুব সক্রিয় ছিলেন তিনি।

তবে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা বলেন, ব্যক্তি প্রণববাবুর শক্তিস্তম্ভ ছিলেন শুভ্রাদেবী। প্রণববাবু তাঁকে ডাকতেন ‘গীতা’ বলে। ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গেও শুভ্রাদেবীর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। মাঝেমধ্যে প্রণববাবুকে না জানিয়ে শুভ্রাদেবীকে ফোন করে তাঁর হাতের রান্না খেতে চলে আসতেন ইন্দিরা গাঁধী। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর দীর্ঘ দিন ভারতে আত্মগোপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সময় দীর্ঘ দিন প্রণববাবুর বাড়িতেই ছিলেন। শুভ্রাদেবীর সঙ্গে তখনই হাসিনার দিদি-বোনের মতো স্নেহের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। হাসিনার ছেলেমেয়েরাও বড় মাসির মতোই দেখেন শুভ্রাদেবীকে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই আজ প্রণববাবুকে ফোন করে সমবেদনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

দেখুন গ্যালারি:

স্মরণে শুভ্রা

স্মৃতিচিত্রে শুভ্রা

তবে গত কিছু বছর ধরে শুভ্রাদেবীর শরীর ভাল যাচ্ছিল না। এমনিতেই হাঁটুতে স্নায়ুর সমস্যা ছিল। তার পর গত বছর তিনি বড় ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পর পর দু’বার অস্ত্রোপচারের পর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এ যাত্রায় আর পেরে উঠলেন না। গত ৭ অগস্ট প্রণববাবু যখন পুরী সফরে ছিলেন সে দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে সাময়িক অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় সঙ্কট তীব্র হয়। ফলে একপ্রকার ‘লাইফ সাপোর্ট’-এই ছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE