Advertisement
E-Paper

লাগাতার পাক হামলায় সংশয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরে এক সপ্তাহও কাটল না। এর মধ্যেই পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভবিষ্যতের সামনে একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল। সৌজন্য, গতকাল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার পাক হামলা। ভারত যার ‘যোগ্য’ জবাব দিয়েছে বলে আজ দাবি করেছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪০
সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরে এক সপ্তাহও কাটল না। এর মধ্যেই পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভবিষ্যতের সামনে একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল।

সৌজন্য, গতকাল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার পাক হামলা। ভারত যার ‘যোগ্য’ জবাব দিয়েছে বলে আজ দাবি করেছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। সেই অশান্তির আগুনে আজ আরও ঘি ঢেলেছে একটি ড্রোনকে নিয়ে টানাপড়েন।

ইসলামাবাদের দাবি, ড্রোনটি ভারতের। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ছবি তুলছিল সেটি। আজ সে বিষয়ে সরকারি ভাবে অভিযোগ জানাতে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠায় ইসলামাবাদ। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে নয়াদিল্লির বক্তব্য, চিনা মডেলের ওই ধাঁচের ড্রোন ভারত ব্যবহার করে না। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ওই ড্রোনটি আসলে পাকিস্তানের পঞ্জাব পুলিশের। তারা চিনের কাছ থেকে সেটি কিনেছিল। সেটিকেই ভুল করে গুলি করে নামিয়েছে পাক সেনা। ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলতেই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে পাকিস্তান। আর এই চাপানউতোরের ফলে দু’দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত একাধিক সরকারি পর্যায়ের বৈঠক আদৌ হবে কি না, এখন সেই প্রশ্ন উঠছে।

গত শুক্রবার রাশিয়ার উফায় ব্রিক্‌স সম্মেলনের ফাঁকে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ নীরবতার পরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কী ভাবে ফের শুরু করা য়ায়, তার একটা রোড ম্যাপও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে যে ভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে, তাতে মোদী-সরকারের পক্ষে শুধু শান্তির বার্তা আওড়ানো মুশকিল।

ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, উফায় প্রধানমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতির পরে উত্তেজনা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ সেই বিবৃতিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ না থাকায় ঘরোয়া রাজনীতিতে সমস্যার মুখ পড়তে হয়েছে নওয়াজ প্রশাসনকে। বৈঠকের দিন তিনেক পরেই পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ইসলামাবাদে বলেন, বালুচিস্তানে ভারতীয় সন্ত্রাস বা কাশ্মীর প্রসঙ্গ ছাড়া কোনও দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা থেকেই এই বিবৃতি, এই মনে করে আজিজকে তখন গুরুত্ব দিতে চায়নি নয়াদিল্লি। উল্টে সাউথ ব্লক এই বার্তাই দিচ্ছিল যে, ভারত আলোচনার পক্ষে, শান্তির পক্ষে।

ছবিটা বদলে গেল দু’দিনে।

গত ৪৮ ঘণ্টায় জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর সেক্টরে সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে সমানে গুলি চালাচ্ছে পাক সেনা। গুলিতে এক বিএসএফ জওয়ান মারাও গিয়েছেন। গুলিবর্ষণ নিয়ে ভারতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে ভারত। অন্য দিকে, ইসলামাবাদকে এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ জানায় পাকিস্তানে থাকা ভারতীয় হাইকমিশন। আজ বিদেশসচিব জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে পাক প্রশাসন এ নিয়ে কোনও জবাব তো দেয়ইনি, উল্টে গতকাল থেকে মর্টার ছোড়া শুরু করেছে।’’ পাক মর্টারে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই পাল্টা মর্টার ছোড়ে ভারত। ‘‘তারপরেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাসিত,’’ জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। পাকিস্তানের অবশ্য দাবি, ভারতীয় মর্টারে পাঁচ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে, আর এস পুরা এলাকায় পাক সেনার গুলিতে চার গ্রামবাসী গুরুতর জখম হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতের গ্রাম লক্ষ করে হামলা শুরু হওয়ায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকায় বেশ কিছু গ্রাম ফের খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাক আগ্রাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তারপরে পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা করে নর্থ ব্লকে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ভারত যে শান্তির পক্ষে এবং সমস্যার সমাধানে আলোচনায় বসতে রাজি, পরে সে কথা জানিয়ে বিদেশসচিবও বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরে পাকিস্তান বিনা প্ররোচনায় গুলি ও মর্টার চালানোয় সীমান্ত পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে পড়েছে। বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একাধিক বার আবেদন জানানো সত্ত্বেও গুলি চালানো বন্ধ না হওয়ায় ভারতের পক্ষ থেকে যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে।’’

আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। সংসদে বিরোধী আক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখেই কেন্দ্র পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিতে চাইছে। নয়াদিল্লি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, ভারত শান্তির পক্ষে। তা বলে সন্ত্রাসের প্রশ্নে কোনও ধরনের সমঝোতা করবে না সরকার। পাক সেনা বিনা প্ররোচনায় হামলা চালালে তার যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত ভারত।

নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাক বাহিনীর এই আগ্রাসন দেখে সেনাবাহিনী ও সব গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বর্ষার সুযোগে জঙ্গিরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে পারে সেই লক্ষ্যেই এ ভাবে গুলি চালাচ্ছে পাক সেনা। কালই তিন পাক জঙ্গির অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দিয়েছে ভারত।

উত্তেজনার এই আবহে এখন দু’দেশের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা-সহ একাধিক সরকারি পর্যায়ের বৈঠকের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বৈঠকগুলি হবে কি না, তা নিয়ে আজ সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি বিদেশসচিব। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বৈঠক দিল্লিতে হবে। তবে এখনও দিন ঠিক হয়নি।’’ সাউথ ব্লকের বক্তব্য, এখন সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্তে শান্তি ফেরানো।

তবে কূটনৈতিক স্তরের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টার নেতিবাচক বক্তব্যের থেকে সরকারি ভাবে এখনও নয়াদিল্লি ভরসা রাখছে যৌথ বিবৃতির উপরেই। কারণ কেন্দ্র জানে, দু’দেশের সরকারকেই ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। সেই চাপ সামলাতেই সরতাজকে কাশ্মীর থেকে বালুচিস্তান নিয়ে মুখ খুলতে হয়েছে। নিয়ন্ত্ররেখায় লাগাতার গুলি চালানো, ড্রোন ধ্বংস, হাইকমিশনারকে তলব— এ ধরনের সব পদক্ষেপ সেই পরিচিত ভারত বিরোধী ছকের অঙ্গ বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। ঠিক তেমনই দিল্লিও সীমান্ত হানা রুখতে পাল্টা গুলি চালিয়ে বার্তা দিয়েছে, সন্ত্রাস প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না।

শীর্ষ স্তরে যে শান্তিু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা বন্ধ করতে চায় না ভারত। কিন্তু অস্থিরতা যদি বাড়তেই থাকে, তা হলে বৈঠক-কূটনীতির ভবিষ্যৎ কার্যত অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।

abpnewsletters Pakistan India effective and forceful kashmir Jammu and Kashmir BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy