E-Paper

সংখ্যালঘু হত্যা নিয়ে কড়া বার্তা ঢাকাকে, দাবি সুষ্ঠু নির্বাচনেরও

বাংলাদেশে ফিরে জনতার তরফে বিপুল অভ্যর্থনা পেয়েছেন খালেদা-পুত্র তারেক। তাঁর বাংলাদেশে ফেরাকে কী ভাবে দেখছে দিল্লি?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৮

—প্রতীকী চিত্র।

বাংলাদেশে ভারত সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন চায়। বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের ফেরার বিষয়টিকে সেই দৃষ্টিতেই দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করলেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল।

পাশাপাশি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক দীপুচন্দ্র দাসকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, চরমপন্থীদের তরফে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের মতো সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত চলতে থাকা এই বিরোধিতাকে রাজনৈতিক হিংসা বা সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ির নামে নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না।

গত কাল বাংলাদেশে ফিরে জনতার তরফে বিপুল অভ্যর্থনা পেয়েছেন খালেদা-পুত্র তারেক। তাঁর বাংলাদেশে ফেরাকে কী ভাবে দেখছে দিল্লি? এই প্রশ্নের জবাবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। এই বিষয়টিকে (তারেকের ফেরা) সেই প্রেক্ষিতেই দেখা প্রয়োজন।’’

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, জামাতের মতো মৌলবাদী শক্তিগুলিকে ঠেকাতে বাংলাদেশে আপাতত বিএনপি-ই উপযুক্ত শক্তি হতে পারে বলে মনে করছে দিল্লি। কারণ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। ভোটের ময়দানে তাদের আসার কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। সম্প্রতি তারেক বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার মতো মঞ্চ গড়ার কথা বলেছেন। যা ভারতের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই আজ দিল্লি তারেককে বোঝাতে চেয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব রয়েছে তাঁর। এবং সে কাজ করার উপযুক্ত ক্ষমতা তাঁর রয়েছে বলেও দিল্লি মনে করে।

পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে সরাসরি বিঁধেছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমরা সকলেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী জানি। আমরা পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রেখেছি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অবস্থান কী এবং কী হওয়া উচিত তা আপনাদের মাঝে মাঝে জানিয়েছি। চরমপন্থীদের তরফে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের মতো সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত চলতে থাকা বিরোধিতা গভীর উদ্বেগের বিষয়।’’

জায়সওয়ালের কথায়, ‘‘ময়মনসিংহে সম্প্রতি এক হিন্দু যুবকের (দীপুচন্দ্র দাস) ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের আমরা নিন্দা করছি। আমাদের আশা খুনিদের বিচার হবে। নিরপেক্ষ সূত্রের মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হওয়া ২৯০০টি ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে আছে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও জমি দখল। এই ঘটনাগুলিকে কেবল সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ি বা রাজনৈতিক হিংসা বলে নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না।’’

বুধবার ফের বাংলাদেশের রাজবাড়ি শহরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন অমৃত মণ্ডল নামে এক হিন্দু যুবক। পুলিশের দাবি, মণ্ডল ও তাঁর সহযোগীরা একটি অপরাধ-চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বুধবার তাঁরা স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে তোলা আদায়ের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তার পরেই স্থানীয়দের একাংশ অমৃতদের উপরে চড়াও হন। গণপিটুনির ফলে অমৃত গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশের দাবি, অমৃতের বাকি সহযোগীদের বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

ময়মনসিংহে দীপুচন্দ্র দাসের হত্যা নিয়ে আজ সরব হয়েছেন বেশ কয়েক জন অভিনেতা-অভিনেত্রী। সমাজমাধ্যমে ‘দীপুচন্দ্র দাস’ শীর্ষক এক দীর্ঘ পোস্টে অভিনেত্রী জাহ্নবী কপূর বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যা ঘটছে তা বর্বরের কাজ। এটা হত্যাকাণ্ড এবং এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যদি আপনারা এই অমানবিক গণপিটুনিতে খুনের কথা না জানেন, তবে ঘটনার কথা পড়ুন, জানুন। ভিডিয়ো দেখুন। প্রশ্ন করুন। আমরা বিশ্বের অন্য প্রান্তে হওয়া ঘটনা নিয়ে গলা ফাটাই। কিন্তু আমাদের ভাইবোনেদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।’’ প্রায় একই সুর অভিনেত্রী জয়া প্রদা ও কাজল আগরওয়ালেরও। অভিনেতা মনোজ জোশীর কথায়, ‘‘গাজ়া বা প্যালেস্টাইনে কিছু হলে সকলেই সরব হন। কিন্তু বাংলাদেশে এক জন হিন্দু খুন হলে কেউ সরব হন না। সময়ই এর জবাব দেবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tarique Rahman Bangladesh Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy