Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধ নয়, আত্মরক্ষার্থেই প্রত্যাঘাত, অভিযানের পরেই বিশ্বকে বার্তা দিল্লির

আশঙ্কা রয়েছে নতুন করে জঙ্গি হামলার। ভারতের দাবি, বাধ্য হয়েই আজ পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি শিবিরে আঘাত হানতে হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

আশঙ্কা রয়েছে নতুন করে জঙ্গি হামলার। ভারতের দাবি, বাধ্য হয়েই আজ পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি শিবিরে আঘাত হানতে হয়েছে। বায়ুসেনা অভিযানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আন্তর্জাতিক বিশ্বকে এই বার্তা দিয়ে নয়াদিল্লি বুঝিয়ে দিল, যুদ্ধ নয়, কেবল আত্মরক্ষার্থেই প্রত্যাঘাত করেছে ভারত। ফলস্বরূপ, এ দিন রাত পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন ও অস্ট্রেলিয়া সংযত থাকার পরামর্শ দিলেও দিল্লির সমালোচনা করেনি। ফ্রান্সের মতো দেশ সরাসরি ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। কূটনীতিতে যাকে বড় সাফল্য বলেই মনে করছে ভারত।

আজ সরকারি ভাবে ভারতের পক্ষ থেকে বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযানের তথ্য জানিয়ে বিবৃতি দেন বিদেশসচিব বিজয় গোখলে। তিনি জানান, দেশে ফের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকায় আজ সকালে ‘নন মিলিটারি প্রিঅ্যাম্পটিভ অ্যাকশন’ নিতে বাধ্য হয় ভারত। আমেরিকা, ইজরায়েলের দিক থেকে এ ধরনের অভিযানের নজির থাকলেও, ভারতের কূটনৈতিক ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম বার এই শব্দবন্ধনী ব্যবহার

করা হল।

সাউথ ব্লকের ব্যাখ্যা, আত্মরক্ষার্থে অসামরিক অভিযান বোঝাতেই ওই শব্দবন্ধনী ব্যবহার করা হয়েছে। ভারত বার্তা দিতে চেয়েছে যে, পাকিস্তানের সেনা বা নাগরিকদের ক্ষতি সাধন করা উদ্দেশ্য ছিল না। কেবল জঙ্গি নিধনের উদ্দেশ্যেই অভিযান হয়েছে। তাই আগের বার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে বিদেশসচিবের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে সেনার ডিজিএমও উপস্থিত থাকলেও, আজ একাই বিবৃতি দিতে আসেন গোখলে। বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ভারত যে সেনা হুঙ্কার দিচ্ছে না সেটা বোঝাতেই বিদেশ সচিবকে পাঠানো হয়েছিল। কৌশলগত কারণেই কী ভাবে, কারা জঙ্গিদের আক্রমণ করেছে, তা নিয়েও মুখ খোলেননি বিদেশসচিব।

আজ আত্মপক্ষ সমর্থনে দিল্লি জানিয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে মাটিতে জইশ-ই মহম্মদ সংগঠনের জঙ্গিরা আধাসেনার উপর হামলা চালিয়েছিল। ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা জইশ এবং‌ তার মাথা মাসুদ আজাহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এসেছে। কিন্তু এ যাবৎ পাকিস্তান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি ভারত জানতে পারে, জইশ ফের ভারতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। আত্মরক্ষার্থেই তাই বালাকোটে জইশ প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এমন নিশানায় আঘাত করা হয়েছে, যাতে কোনও নাগরিকের ক্ষতি না হয়। দিল্লি বোঝাতে চেয়েছে, সামরিক আগ্রাসনের লক্ষ্য আদৌ ছিল না। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আত্মরক্ষার্থে পদক্ষেপ করার অধিকার সব দেশের রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বও ওই সমীকরণ মেনে চলে। ভারত সেই পথেই হেঁটেছে।

অভিযানের পরেই নিজেদের অবস্থান বোঝাতে সক্রিয় হয় সাউথ ব্লক। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইকেল পম্পেয়ো-র সঙ্গে। অন্য দিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক-সহ ছ’টি আশিয়ান দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে এই অভিযানের যৌক্তিকতা

ব্যাখ্যা করেন।

আগামিকাল চিন সফরে যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেখানে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ছাড়াও রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন তিনি। আজ পাক বিদেশমন্ত্রী কথা বলেন চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে।

তার পরে চিন দু’পক্ষকে শান্ত থাকার কথা বলে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতে খুব একটা অখুশি নয় সাউথ ব্লক। চিনের পরে ইসলামিক দেশগুলির সঙ্গেও বৈঠকে বসার কথা সুষমার। সেখানে পাকিস্তানকে কী ভাবে সুষমা সামলান, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ ভারতের কাছে। রাতে ফ্রান্স দিল্লির পাশে দাঁড়িয়ে বলে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ভারত যে পদক্ষেপ করেছে, তা ন্যায্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE