পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের পর আতঙ্কের ছায়া কাশ্মীর জুড়ে। উপত্যকার অধিকাংশ বাসিন্দাই ত্রস্ত। তাঁদের প্রার্থনা, অনেক হয়েছে। এ বারে শান্তি ফিরুক। কিন্তু সেই শান্তি কবে ফিরবে, তা নিয়েই সংশয়। আজই নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। একই সঙ্গে, উপত্যকাবাসীকে শান্ত থাকার আর্জিও জানানো হয়েছে।
দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাপানউতোরের মাসুল তাঁদেরই দিতে হচ্ছে বলে মনে করেন উপত্যকার অধিকাংশ বাসিন্দা। এখন তাঁদের আশঙ্কা, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এ ভাবে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে তা শেষ পর্যন্ত পুরোদস্তুর যুদ্ধে না পরিণত হয়! লাল চকের কাপড় ব্যবসায়ী মহম্মদ ইমরান বলছেন, ‘‘যুদ্ধ চাই না। পরমাণু যুদ্ধ হলে মানুষের কী সর্বনাশ হবে, তা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা গরিব মানুষ। আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই।’’ ৮০ বছরের এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষকের আর্তি, ‘‘আমি চাই, আমার উত্তরসূরিরা কলম ধরুক, বন্দুক নয়।’’ প্রতিদিনের মতো আজও খোলা ছিল উরি টাউন মার্কেট। তবে ক্রেতা হতে গোনা। তাঁদেরই একজনের সাহসী মন্তব্য, ‘‘ভয় পাব কেন! সেনাবাহিনী তো আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।’’ কিন্তু এই সাহস উপত্যকার ক’জন দেখাতে পারছেন!
হান্দওয়ারা জেলার পাটওয়ারি নওগাঁম এলাকায় ২০০টি পরিবারের বাস নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিদ আকবরের কথায়, ‘‘এ আর নতুন কী! দেশভাগের পর থেকেই তো দুই দেশের এই শত্রুতা সাধারণ মানুষকে মুখ বুজে সহ্য
করতে হচ্ছে।’’
উপত্যকা জুড়ে যে পুরোপুরি আতঙ্কের পরিবেশ, তা স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ থেকেও। ডিভিশনাল কমিশনার বসির খান জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া বারামুলা, বান্দিপোরা এবং কুপওয়ারার বাসিন্দাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই সব জেলার বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, বাঙ্কারের ভিতরে থাকতে। কারণ, সীমান্তের ওপার থেকে যে কোনও সময় হামলা হতে পারে বা গুলি চলতে পারে।’’ উরি সেক্টরেও বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বারামুলার ডেপুটি কমিশনার জি এন ইতু বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখায় এলাকাবাসীকে বলা হয়েছে, একসঙ্গে জড়ো হবেন না। কয়েকটি বাঙ্কার তৈরি করতেও বলা হয়েছে। সন্ধ্যের পর বাড়িগুলিতে আলো নিভিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই।’’
আরও পড়ুন: ভারতকে ফের হুমকি, সেনা তৈরি ইমরানেরও
উপত্যকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোনও ফাঁক রাখছে না প্রশাসন। এ দিন বিকেলে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যসচিব বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আর্জি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো গুজবে কান না দিতে বলেছেন। গত রবিবারও একই আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক।
দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেও নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বাণিজ্য আজও চালু রয়েছে। এটুকুতেই আলো দেখছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy