Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘জবাব’ দিয়ে তৃপ্ত মোদীর বারাণসী, বিজেপিও

চৌবেপুর গ্রামের ছেলেটা ক’দিন আগে স্ত্রী রেণুকে যখন শেষ বার ফোন করেছিলেন, বলেছিলেন, “তুমি ঘর সামলাও, আমি দেশ সামলে ফিরব।”

শোকার্ত: নিহত জওয়ান রমেশ যাদবের ছবির সামনে মা। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: নিহত জওয়ান রমেশ যাদবের ছবির সামনে মা। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
বারাণসী শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

চৌবেপুর গ্রামের ছেলেটা ক’দিন আগে স্ত্রী রেণুকে যখন শেষ বার ফোন করেছিলেন, বলেছিলেন, “তুমি ঘর সামলাও, আমি দেশ সামলে ফিরব।” সিআরপিএফ জওয়ান রমেশ যাদব ফিরেছিলেন, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। বাবা শ্যামনারায়ণ যাদব সে দিনই বলেছিলেন, “আমার অন্য ছেলেকেও সীমান্তে পাঠাব। পাকিস্তানকে জবাব দেওয়া দরকার।’’

দারিদ্রের ছায়ামাখা বাড়িটায় দেড় সপ্তাহ আগেও বিদ্যুতের আলো ছিল না। রমেশের দেহ কফিনবন্দি হয়ে ফেরার পরে ছুটে আসেন বিজেপির তাবড় নেতা। রাতারাতি বসে যায় ইলেকট্রিক পোল, ট্রান্সফর্মার, এমনকি টেলিভিশন সেটও। সেই টিভি অবশ্য এ ক’দিন বন্ধই ছিল। কিন্তু সকালে ছুটে আসেন চৌবেপুর গ্রামের বাসিন্দারা। গোটা গ্রামে তখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা। জওয়ানের মৃত্যুর জবাব দেওয়া গেছে। যাদব পরিবারের টিভির সামনেই ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম। যে গ্রাম ক’দিন আগেই আট কিলোমিটার হেঁটে বিদায় দিয়েছে ‘গাঁও কা লাল’কে।

চোখে জল নিয়েই শ্যামনারায়ণ বলছেন, “আজ জবাব দেওয়া গেল। ভারত প্রত্যাঘাত করতে জানে।” রমেশের ছবিতে নতুন মালা চড়িয়ে তার পাশে ঠায় বসে

মা রাজমতী দেবী। বিড়বিড় করে বলছেন, “যখন জন্মেছিল তখন ও ছিল আমার ছেলে। যখন গেল, তখন ও গোটা দেশের। আমার দুঃখ জীবনে মিটবে না, তবু গর্ব হয় ছেলের জন্য।” এখনও কথা বলার অবস্থায় নেই স্ত্রী রেণু। দেড় বছরের ছেলে আয়ুষকে কোলে নিয়ে বসে আছেন ঘরের ভিতর। অন্ধকার ঘরের ভিতর বাইরে থেকে এক চিলতে আলো পড়ছে মুখের উপর। বদলার খবরে কোথাও যেন তৃপ্তি তাঁর চোখেও।

কাল তেরো দিনের কাজ। বাড়িতে তারই তোড়জোর চলছিল। নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রের অন্তর্গত চৌবেপুরে আজ সকাল থেকে আচমকাই বদলে গেল ছবিটা। তেরঙ্গা, আতসবাজির রোশনাই অলিতে-গলিতে। দালমণ্ডিতে তেরঙ্গা হাতে সংখ্যালঘুরাও আতসবাজিতে মাতলেন। সঙ্কটমোচন মন্দির থেকে বেরিয়ে ভক্তরা বলছেন, ‘জয় শ্রীরাম’। আর মোদী-মোদী ধ্বনি। তার মধ্যেই আজ কাশীতে এলেন প্রধানমন্ত্রীর সেনাপতি অমিত শাহ।

পাঁচ বছরে মোদী সরকারের ‘সুফল’ পাওয়া ২২ কোটি পরিবারে প্রদীপ জ্বালিয়ে ফাল্গুনে দীপাবলি পর্ব নতুন করে শুরু করতেই তাঁর এই সফর। যার আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমলজ্যোতি সঙ্কল্প অভিযান।’ বারাণসীর পাশে গাজিপুরে এক দলিত পরিবারে প্রদীপ জ্বালিয়ে তা শুরুও করলেন অমিত। আর তার পরেই জনসভায় দাঁড়িয়ে শান দিলেন মোদীত্বে। অমিত শাহ জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়লেন, “পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব কে দিতে পারেন?” উপস্থিত জনতা ‘মোদী মোদী’ জবাবে তৃপ্ত বিজেপি নেতারা। অমিত তাঁর বক্তৃতায় আগাগোড়া চড়া সুরে প্রচার করে বোঝালেন, পাঁচ বছরের কাজের হিসেব নিয়ে বিরোধীরা যতই মোদী সরকারকে নিশানা করুক, ভোটে বিজেপির তাস হবে পাল্টা হামলা নিয়ে এই হাওয়াটুকুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Air Strike PM Modi Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE