ভারত এবং ইজ়রায়েল— দুই দেশই চায় তাদের ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। সেই কারণে দুই দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি (এফটিএ) দু’দফায় বাস্তবায়িত করার কথা ভাবা হচ্ছে। রবিবার এমনই জানালেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
বাণিজ্যচুক্তিতে কী কী বিষয়ে জোর দেওয়া হবে, যাতে দুই দেশই উপকৃত হয়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু হবে শীঘ্রই। বৃহস্পতিবার ভারত এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে আলোচনা শুরু করার জন্য একটি শর্তাবলী স্বাক্ষর হয়েছে।
কোনও দেশের বাজারে ব্যবসা করতে গেলে বিদেশি সংস্থাকে কিছু শুল্ক দিতে হয়। শুধু তা-ই নয়, কোনও দেশ থেকে কিছু আমদানি করা হলে সেখানেও শুল্ক গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। ভারত এবং ইজ়রায়েল চায় শুল্ক বধা দূর করে উভয় দেশের পণ্যের বাজারকে উন্মুক্ত করতে। সে ক্ষেত্রে শুল্ক পদ্ধতির সরলীকরণের প্রয়োজন। এ ছাড়াও, বিনিয়োগে জোর বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মতো বিষয়গুলিও রয়েছে। এই সব শর্তকে সামনে রেখেই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ভারত এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে আলোচনা হবে।
গয়ালের কথায়, ‘‘আমরা দু’টি ধাপে বাণিজ্যচুক্তি বাস্তবায়ন করার কথা ভাবছি। আলোচনা শুরু হলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা চাই প্রথম দফার প্রক্রিয়া দ্রুত চূড়ান্ত করতে, যাতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হন।’’ চুক্তি দু’দেশেরই বিনিয়োগকারীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও বেশি সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বর্তমানে ইজ়রায়েলেই রয়েছে। তাঁর সঙ্গে রয়েছে ৬০ সদস্যের একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল। গয়াল জানান, ইজ়রায়েলের শিল্পমন্ত্রী নীর বরকত চান, বাণিজ্যচুক্তিতে স্বল্প-ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলির দিকে প্রথমে মনোনিবেশ করতে। ইজ়রায়েলের মেট্রো প্রকল্প শুরু হচ্ছে। সেই প্রকল্প ভারতীয় সংস্থা যোগ দেবে বলে আশাবাদী গয়াল। তিনি জানান, ভারতে ২৩টি শহরে মেট্রো চলে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। গয়াল বলেন, ‘‘আশা করি অনেক ভারতীয় সংস্থাই ইজ়রায়েলে মেট্রো প্রকল্পে আগ্রহ দেখাবে। দরপত্র জমা দেবে।’’
আরও পড়ুন:
বস্তুত, ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি সেরে নিয়েছে ইজ়রায়েল। এই তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জাপান, তাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলি। ভারত এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে এই চুক্তি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের পথকে আরও প্রশস্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যেও একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি হওয়ার কথা আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি। চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিস্তর আলোচনাও চলছে। সূত্রের খবর, কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা এখনও কাটেনি। মোদী সরকার সম্প্রতি এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারত কোনও একটি দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে না। বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সমীকরণের উপর জোর দিচ্ছে ভারত। এই আবহে পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ইজ়রায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।