Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরের সঙ্গে হানা গুজরাত উপকূলেও

আর এক সপ্তাহ পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত হতে চলেছেন ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তার ঠিক আগে আজ সীমান্তে রক্তপাত ও কূটনৈতিক দোষারোপ চরম পর্যায়ে পৌঁছল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৭

আর এক সপ্তাহ পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত হতে চলেছেন ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তার ঠিক আগে আজ সীমান্তে রক্তপাত ও কূটনৈতিক দোষারোপ চরম পর্যায়ে পৌঁছল। গুজরাতে পাক নৌবাহিনীর আক্রমণে আজ ভোরে মারা গেলেন ভারতীয় এক মৎস্যজীবী। কাশ্মীর সীমান্তের গত কাল ও আজ— টানা দু’দিন ধরে লাগাতার গুলিবর্ষণ জারি রাখল পাক সেনা। উদ্দেশ্য সীমান্তে অশান্তি তৈরি করা ও সেই সুযোগে ভারতে জঙ্গিদের ঢুকিয়ে দেওয়া। এখানেই শেষ নয়। এই ধরনের হামলা নিয়ে ভারতের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে থাকে পাকিস্তান। সীমান্তে গুলি চালানোর দায় নয়াদিল্লির ঘাড়ে ঠেলে দেয়। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে পাক সরকারের কোনও কর্তা বিবৃতি দিয়ে থাকেন। আজ কিন্তু নওয়াজ প্রশাসন সরকারি ভাবে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইমকমিশনার জে পি সিংহকে তলব করে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছে। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী কয়েক সপ্তাহে ভারত-পাক উত্তেজনা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।

সাউথ ব্লকের অনুমান, পাক সেনা, আইএসআই ও মোল্লাতন্ত্রের চাপে কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁর ভারত-নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনও বাড়তি জমি পাচ্ছেন না। ফলে তাঁর সদিচ্ছা থাকলেও পরিস্থিতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। যেমন, গত জুলাই মাসে রাশিয়ায় উফা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শান্তিপ্রস্তাব দিলেও তা পাতে পড়ার আগেই কার্যত রণক্ষেত্রে হয়ে ওঠে কাশ্মীর সীমান্ত। গত দু’মাস ধরেই অশান্ত হয়ে রয়েছে নিয়ন্ত্রণরেখা। আগামী দিনে, বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের মুখে যে এই পরিস্থিতিই জারি থাকবে, গুজরাত উপকূলে হামলা আজ স্পষ্ট ভাবেই সেই বার্তা দিল বলে মনে করছেন ভারতের শীর্ষ-কর্তারা।

আজ ঠিক কী ঘটেছে গুজরাতে?

দিল্লির অভিযোগ, ভারতীয় জলসীমান্তের মধ্যে থাকা দু’টি জেলে নৌকা প্রেমরাজ ও রামরাজকে লক্ষ্য করে আজ সকালে হঠাৎই গুলি চালাতে থাকে পাকিস্তান মেরিটাইম সিকিউরিটি এজেন্সি (এমএসএ)। এটি পাক নৌসেনার আধাসামরিক শাখা। তাদের গুলিতে মারা যান ইকবাল নামে পোরবন্দরের এক মৎস্যজীবী। তিনি ছিলেন প্রেমরাজ নামের নৌকোয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর সেটি ৫ জনকে নিয়ে ওখা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। আন্তর্জাতিক জলসীমাম্তের কাছে থাকলেও হামলার সময় প্রেমরাজ ভারতেরই জলসীমায় ছিল। সে সময়ে সমুদ্রে নজরদারি দায়িত্বে ছিল বিজিত ও মীরাবেন। হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ওই দু’টি জাহাজ। ক্ষতিগ্রস্ত নৌকা-সহ আন্তর্জাতিক জল সীমান্তের কাছে যে জেলে নৌকোগুলি ছিল সেগুলিকে পাহারা দিয়ে বন্দরে নিয়ে আসে তারা। ২০১০ সালের পর থেকে এই নিয়ে ছ’বার ভারতীয় ধীবরদের উপরে গুলি চালাল পাক বাহিনী।

পাকিস্তান মেরিটাইম সিকিউরিটি এজেন্সির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই সময়ে তাদের কোনও জাহাজ ওই এলাকায় ছিল না। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, একটি বড় নৌকো থেকে তাঁদের দিকে ৫-৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তাতে ইকবাল মারা যান। পাক জলসীমান্ত থেকে আসা নৌকোটিতে জনা চল্লিশ লোক থাকলেও, সেটিতে কোনও নম্বর বা দেশের পতাকা ছিল না। হামলাকারী নৌকোটির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারত। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বিমানবাহিনীরও।

এ দিন কাশ্মীর সীমান্তও উত্তপ্ত ছিল যথারীতি। গত সপ্তাহে দিল্লিতে বিএসএফ ও ডিজি রেঞ্জার্সের বৈঠকের সময় সীমান্তে গোলাগুলি চললেও পরে তা সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়। কিন্তু গত দু’দিন ধরে ফের গোলাগুলি ছোড়া হচ্ছে ও-পার থেকে। যার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু সশস্ত্র জঙ্গি আজ কাশ্মীরের গুরেজ সেক্টরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। কাল রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় জঙ্গি গতিবিধি নজরে এসেছিল সেনাবাহিনীর। ফলে তৈরি ছিল তারা। আজ গুরেজ এলাকায় ঢোকার পরে ৫ জঙ্গিকে খতম করে সেনা।

সকালে ওই ঘটনার কিছু পরেই পাক বিদেশমন্ত্রকের ডিজি মহম্মদ ফয়জল আজ সকালে ডেকে পাঠান জে পি সিংহকে। পরে একটি বিবৃতি দিয়ে পাক সরকার জানায়, ‘ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী সীমান্তে একতরফা গুলি চালিয়ে পাকিস্তানের নিরীহ নাগরিকদের নিশানা করছে। এটি খুবই নিন্দনীয়। পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘২০০৩ সালে যে সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভারত যেন মেনে চলে। নিয়ন্ত্রণরেখা ও সীমান্তে শান্তি ফেরাতে এটা অত্যন্ত জরুরি।

বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এটা পাকিস্তানের পুরনো কৌশল। কখনও সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে, কখনও বিবৃতির মাধ্যমে তারা একটি আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে নওয়াজের কতটা ভূমিকা রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখতে চাইছে সাউথ ব্লক।

Pakistan Indian fisherman Gujarat Coast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy