সুন্নি জঙ্গিদের কী ভাবে ঠেকানো যায় এবং ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা খতিয়ে দেখতে যে দিন দেশে পা রাখল মার্কিন সেনা উপদেষ্টার প্রথম দলটি, সে দিনই ইরাকে অন্যতম বড় বিমানঘাঁটির একটিতে হামলা চালাল আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত)।
মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি বাগদাদে গিয়ে ইরাককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিলেও জেহাদিদের ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি। তাঁর সাফ কথা, “যাঁরা সংবিধান বিরোধী, তাঁরাই এ সব বলছেন। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। ভোটারদের থেকে ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।” ফলে সমাধানের পথ আপাতত দূর অস্ৎ। আজও বাগদাদ থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে ইয়াথ্রিব শহরে ইরাকি সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আইএসআইএল এবং সুন্নি উপজাতির। এতে চার জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। ওই এলাকারই কাছাকাছি বিশাল একটি বিমানঘাঁটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে জঙ্গিরা। পর পর ছুড়েছে মর্টারও। মার্কিন সেনা থাকাকালীন ওই বিমানঘাঁটি ‘ক্যাম্প অ্যানাকোন্ডা’ নামে পরিচিত ছিল। আজই আবার শিয়াদের দু’টি ধর্মস্থানে হামলা চালিয়েছে সুন্নি জঙ্গিরা। হুসেনিয়া বলা হয় ওই ধর্মস্থানকে। উত্তর ইরাকের শারিখানে ওই হামলায় কোনও প্রাণহানির খবর না মিললেও বিস্ফোরণে ধর্মস্থানের বিভিন্ন স্থাপত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইএসআইএল জঙ্গিদের বলভরসা বাড়াতে আজ আল কায়দার সিরিয়া শাখার আল নুসরা ফ্রন্ট জোট বেঁধেছে তাদের সঙ্গে। ইরাক সিরিয়া সীমান্তে আলবু কামাল শহরে এই কথা ঘোষণা করেছে তারা। এক আইএসআইএল জেহাদি আবার টুইটারে সেই খবর স্বীকার করেছে। এই জোটের ফলে পূর্ব সিরিয়ায় (আলবু কামাল) এবং পশ্চিম ইরাকের (আল কায়াম) সীমান্ত এলাকার দু’দিকেই জোরদার হবে জঙ্গিরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রামি আব্দেল রহমান বলছেন, “এই দু’টি জঙ্গি গোষ্ঠী আদতে পরস্পর-বিরোধী। কিন্তু দু’টি গোষ্ঠীই কট্টরপন্থী। এতে ওই অঞ্চলে অন্য জঙ্গিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়বে।”
এর মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, ইরাক সীমান্তে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে সক্রিয় হয়েছে সিরিয়া। কারণ সিরিয়া সীমান্ত থেকে বাগদাদ পর্যন্ত জাতীয় সড়কের বড় অংশ জঙ্গিদের দখলে চলে গিয়েছে। সিরিয়া সীমান্ত থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই বাগদাদে পৌঁছে যেতে পারে জঙ্গিরা। আইএসআইএস সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে নেমেছে। তাই মার্কিন প্রশাসনের দাবি, পশ্চিম ইরাকে হানা দিয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধবিমান। কিন্তু এই হানায় অন্তত ৫৭ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে একটি সূত্রে দাবি। সিরিয়া সরকার অবশ্য এ খবর স্বীকার করেনি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ গত কালই জানিয়েছিল, ইরাকে হামলায় ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। যা জেনে ইরাক নিয়ে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে ন্যাটো। এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিও। পাশাপাশিই তিনি বৈঠক করবেন উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলির সঙ্গে। ওই আলোচনা জুড়েই থাকবে ইরাক পরিস্থিতি।
পেন্টাগন প্রেস সচিব জন কির্বি জানিয়েছেন, ১৩০ জন মার্কিন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে। ৪০ জন ইতিমধ্যেই ইরাকে পৌঁছে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর উদ্বেগ, “ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে আইএসআইএস ক্রমশ আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। বাগদাদে সেই আশঙ্কা দূর করতেই বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হয়েছে।”
অশান্ত ইরাকে লড়াইয়ের এলাকা থেকে এ দিন আটক ৪৬ জন ভারতীয় নার্সের মধ্যে দু’জনকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই খবর জানিয়েছে। আজই আবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সব উপসাগরীয় দেশের ভারতীয় দূতদের ইরাক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ২৯ জুন ডেকে পাঠানো হয়েছে নয়াদিল্লিতে। কী ভাবে বাকি ভারতীয়দের দেশে ফেরানো হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, “সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। সব রাস্তা খোলা রয়েছে।”
ইরাকে আটকে-পড়া ভারতীয়দের নিরাপত্তার জন্য এ দিন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেরলের দুই দলীয় সাংসদ পি করুণাকরন ও পি রাজীব। সুষমাকে তাঁরা জানিয়েছেন, ইরাকে কর্মরত মানুষের পরিজনেরা খুবই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। সুষমার সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে ঋতব্রত বলেন, “বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ভারতীয়দের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্র যথাসাধ্য করছে। ইরাকে ভারতীয় দূতাবাস তো কাজ করছেই। এক জন বিশেষ দূতকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy