Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রপতির সফরে খুলছে নয়া অধ্যায়

ইজরায়েলি ‘দখলদারি বাহিনীর’ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্লোগানগুলো হয়তো এখনও তাঁর কানে বাজছে! সকালে রামাল্লা থেকে বেরিয়ে আবু দিসের পথেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় চাক্ষুষ করেছেন সংঘাত ও উত্তেজনার দৃশ্য।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫৭

ইজরায়েলি ‘দখলদারি বাহিনীর’ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্লোগানগুলো হয়তো এখনও তাঁর কানে বাজছে! সকালে রামাল্লা থেকে বেরিয়ে আবু দিসের পথেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় চাক্ষুষ করেছেন সংঘাত ও উত্তেজনার দৃশ্য। ডান দিক, বাঁ দিকে কোনটা প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ড, আর কোনটাই বা ইজরায়েলের অধিকৃত বসতি তা প্রতিনিয়ত যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল। পাহাড়ের ভাঁজে হঠাৎই উঠে যাওয়া পাঁচিল। আবার সেই পাঁচিল তোলার বিরুদ্ধে তারই গায়ে ভেঙে দেওয়ার দেওয়াল লিখন।

আবু দিসে পৌঁছে প্যালেস্তাইনি ক্ষোভের আঁচ হাতেনাতে পেয়েছেন প্রণববাবু। আবু দিসের আল-কুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ডক্টরেট দেওয়া হয় প্রণববাবুকে। তার পরে জওহরলাল নেহরুর নামাঙ্কিত একটি স্কুলের উদ্বোধন করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বাদ সাধেন প্যালেস্তাইনি ছাত্র-যুবরাই। ভারত কেন প্যালেস্তাইনের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, তা জানতে চেয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ফলে, স্কুলের উদ্বোধন না করেই বেরিয়ে পড়তে হয় রাষ্ট্রপতিকে। ওই স্কুলের জন্য পাঠানো কিছু বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নিয়ে ভারতের সঙ্গে মন কষাকষিও হয়েছে ইজরায়েলের। আবু দিসে সরঞ্জাম পাঠাতে গেলে ইজরায়েলের বন্দরে তা নামানো ছাড়া পথ নেই। হাইফা বন্দরে সেগুলি নামানোর পরে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, ওই সরঞ্জাম অনেক উচ্চ কম্পাঙ্কের (ফ্রিকোয়েন্সি)। তা স্কুলশিক্ষা ছাড়া অন্য কাজেও ব্যবহার হতে পারে। ফলে, ৪০ দিন হাইফায় পড়েছিল সেগুলি। সে জন্য আবার ১৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়েছে ইজরায়েল। দিল্লির পাল্টা দাবি, সরঞ্জাম আদৌ উচ্চ কম্পাঙ্কের নয়। সেগুলিতে কেবল ব্লুটুথ কানেকশন ছিল। ব্লুটুথ খুলে নেওয়ার পরে সেগুলি গত কাল আবু দিসের স্কুলটিতে পৌঁছয়। প্রণববাবুর অনুষ্ঠান উপলক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে ওই সরঞ্জাম স্কুলে বসানোও হয়। কিন্তু প্যালেস্তাইনি বিক্ষোভের জেরে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি রাষ্ট্রপতি।
তবে মন কষাকষির বিষয়টিকে আপাতত ধামাচাপা দিতে তৎপর দিল্লি ও তেল আভিভ।

প্যালেস্তাইন ছেড়ে মালে আদুমিম চেক পয়েন্ট দিয়ে দুপুরে ইজরায়েলে ঢুকে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন প্রণববাবু। যে দেশে ইজরায়েলের পবিত্র ভূমি নিয়ে আবেগ হয়তো প্যালেস্তাইনের চেয়েও বেশি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে যাচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিবর্তিত সমীকরণের আবহে নরসিংহ রাও সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে প্রথম বার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।. তবু প্যালেস্তাইন নিয়ে ঘরোয়া আবেগ ও তাকে ঘিরে রাজনীতির কারণে সিকি শতাব্দী ধরে তা যথাসম্ভব কার্পেটের তলাতেই মুড়ে রেখেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু দিন অনেক বদলে গিয়েছে। ইজরায়েলের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ আগ্রহী নরেন্দ্র মোদী সরকার।

প্যালেস্তাইনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে যে তারাও বিশেষ উদ্বিগ্ন নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছে ইজরায়েলও। গত কালই তেল আভিভের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্যালেস্তাইনের সঙ্গে ভারতের সুষ্ঠু সম্পর্কে তাদের আপত্তি নেই।. বরং ভারতীয় রাষ্ট্রপতি এই প্রথম যে জেরুজালেম আসছেন সেটাই বড় কথা। নয়াদিল্লির সঙ্গে কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে ইজরায়েল। ভারতীয় রাষ্টপতিকে অভ্যর্থনা জানাতে জেরুজালেমের আয়োজন, রাস্তার দু’ধারে কৌতুহলী ভিড়, রাজপথ জুড়ে ছেয়ে থাকা দু’দেশের পতাকাও যেন সেই বার্তাই দিতে চাইল।

আজ. দুপুরে জেরুজালেম পৌঁছে বিশেষ কর্মসূচি ছিল না রাষ্ট্রপতির। বিকেলে মাউন্ট হার্জল-এ বিশ্ব ইহুদি কেন্দ্র ঘুরে দেখেন তিনি। পরে হলোকস্ট রিসার্চ সেন্টারও ঘুরে দেখেন তিনি। কাল তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিন। পরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বৈত কর ব্যবস্থা এড়ানো (‘ডবল ট্যাক্সেশন অ্যাভয়ডেন্স’) চুক্তি স্বাক্ষর করবে ভারত। তা ছাড়া কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে এক গুচ্ছ সমঝোতা সই হবে দু’দেশের মধ্যে। রাষ্ট্রপতির সফরের এই ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আগামী বছর ইজরায়েল সফরে আসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।

Indian president Pranab Mukhapadhya Palestinian Authority
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy