নেপালের বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে এক ভারতীয়েরও মৃত্যুর খবর এল। মৃতার নাম রাজেশদেবী গোলা। তিনি উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদের বাসিন্দা। মৃতার পরিবার সূত্রে খবর, গত ৭ সেপ্টেম্বর স্বামী রামবীর সিংহ গোলার সঙ্গে কাঠমান্ডুতে বেড়াতে গিয়েছিলেন রাজেশদেবী। তাঁরা কাঠমান্ডুরই একটি হোটেলে উঠেছিলেন। এক সপ্তাহ ধরে বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল দম্পতির। কিন্তু তাঁরা দেশে ফিরে আসার আগেই বিক্ষোভ-আন্দোলনে অশান্ত হয়ে ওঠে নেপাল।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সকালে কাঠমান্ডুতে ভারতীয় পর্যটকদের একটি বাসের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। তাঁদের সমস্ত কিছু লুটপাট করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কয়েক জনক মারধরও করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, পশুপতিনাথ মন্দির দর্শন করে উত্তরপ্রদেশে ফেরার সময় এই হামলা হয়। পর্যটকেরা সকলে অন্ধ্রপ্রদেশের। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, নেপালে হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুতে ভাঙচুর চালান, আগুন ধরিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি ভবন-সহ বিভিন্ন সরকারি ভবনে। বাদ পড়েনি হোটেলগুলিও। জানা গিয়েছে, কাঠমান্ডুরই একটি হোটেলে ওঠেন উত্তরপ্রদেশের ওই দম্পতি। তাঁর যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেই হোটেলেও হামলা চালান অন্দোলনকারীরা। হোটেলে ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণে বাঁচতে আতঙ্কে পর্যটকেরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেন। উত্তরপ্রদেশের এই দম্পতি ছিলেন হোটেলের চারতলায়।
আরও পড়ুন:
পরিবার সূত্রে খবর, পশুপতিনাথ মন্দির দর্শন করতে গিয়েছিলেন রাজেশদেবী এবং রামবীর। তার মধ্যেই নেপালে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ফলে তাঁরা হোটেলবন্দি হয়েই ছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়ে হোটেলগুলিতেও। পর্যটকেরা যখন নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে এ দিক ও দিক আশ্রয় নিচ্ছিলেন, উত্তরপ্রদেশের এই দম্পতিও হোটেলের চারতলা থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। চারতলা থেকে কাপড় এবং বিছানার চাদর দিয়ে দড়ি বানিয়ে দম্পতি যখন নামছিলেন হাত ফস্কে পড়ে যান মহিলা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। গুরুতর জখম হন তাঁর স্বামী রামবীর।
নেপালের হিংসার ঘটনায় এই প্রথম কোনও ভারতীয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। গাজ়িয়াবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌরভ ভট্ট জানিয়েছেন, ওই দম্পতির খবর তাঁদের কাছে পৌঁছোনোর পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মহিলার দেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে পরিবারকে। দম্পতির পুত্র বিশাল বলেন, ‘‘পশুপতিনাথ মন্দির দর্শন করে ফিরে এসে গত ৯ সেপ্টেম্বর হোটেলের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল বাবা-মা। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা হোটেলে ঢোকে। আগুন ধরিয়ে দেয়। বাবা-মা চারতলায় আটকে পড়ে। আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। উপায় না দেখে ওরা বিছানার চাদর, শাড়ি একসঙ্গে জুড়ে দড়ি বানিয়ে ব্যালকনি দিয়ে নামার চেষ্টা করছিল। মা আগে নামছিল। দোতলা পর্যন্ত নামার পরই হাত ফস্কে যায়। নীচে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট পায়। তার পর বাবা নেমে দেখে মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরে সেনার একটি জিপ এসে দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’’